অপরিচিত অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে বিশ্ব : বিশেষজ্ঞরা
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। বাড়ছে সমুদ্রের তাপমাত্রাও। অধিক হারে গলছে অ্যান্টার্কটিকার বরফ। প্রতিদিনই ভাঙছে কোনো না কোনো রেকর্ড। এর জেরে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী, মানুষের বাসযোগ্য পৃথিবী নামক গ্রহটি অপরিচিত হয়ে উঠছে বলে দাবি করছে।
আজ শনিবার (২২ জুলাই) এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপ ও এশিয়া তীব্র দাবদাহে পুড়ছে। এই দাবদাহে ইউরোপে উষ্ণতার আগের সকল রেকর্ড ভেঙে যাবে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উষ্ণতার রেকর্ডের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত যেসব বিষয় রয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে উন্মোচন করা খুবই কষ্টসাধ্য।
এ বিষয় উদঘাটনে গবেষণা চললেও এটি নিয়ে ভয়ে রয়েছেন গবেষকরা। তাদের মতে, গবেষণার মাধ্যমে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ উন্মোচিত হতে পারে, যা আগে দেখেনি বা জানেনি বিশ্ব।
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ভূগোলবিদ টমাস স্মিথ বলেন, ‘আমি বুঝছি না, কীভাবে একই সময়ে সমস্ত বাস্তুসংস্থানের একসঙ্গে রেকর্ড উষ্ণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা একটি অস্বাভাবিক অঞ্চলে রয়েছি।’
২০১৮ সাল থেকে লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে পড়ানো অধ্যাপক ড. পাউলো চেপ্পি বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, একইসঙ্গে এল নিনোর কারণে পৃথিবী এখন অজানা অঞ্চলে রয়েছে।’
চলতি গ্রীষ্মে তাপমাত্রার চারটি রেকর্ড ভেঙেছে। সেগুলো হলো- সর্বোচ্চ তাপমাত্রার দিন, উষ্ণতম জুন, সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ ও অ্যান্টার্কটিকার ইতিহাসের সবচেয়ে কম বরফ।
প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন ছিল চলতি মাসের ৬ তারিখে। ওই দিন বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক শূন্য আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বাড়ার জন্য তেল, গ্যাস ও কয়লা পোড়ানোকে দায়ী করছে বিশেষজ্ঞরা। ইমপেরিয়াল কলেজের জলবায়ু বিষয়ক অধ্যাপক ড. ফ্রেডেরিক অটো বলেন, ‘আমরা যেরকম পূর্বাভাস দিয়েছিলাম ঠিক তেমনটাই হচ্ছে। গ্রিন হাউস গ্যাসের অতিরিক্ত নির্গমন বিশ্বকে আরও উষ্ণ করে তুলছে। এর জন্য শতভাগ দায়ী মানুষ।’
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের অধ্যাপক টমাস স্মিথ বলেন, ‘যদি আমি কোনো কিছুর জন্য বিস্মিত হই সেটি হলো জুনের রেকর্ড তাপমাত্রা। পাঁচ থেকে ছয় মাস না যাওয়া পর্যন্ত বৈশ্বিক উষ্ণতায় এল নিনোর প্রভাব দেখা যাওয়ার কথা না। তবে, সেটি দেখা গেছে।’
স্প্যানিশ শব্দ এল নিনোর অর্থ হলো ‘লিটল বয়’ বা ‘ছোট ছেলে’। মধ্য ও পূর্ব গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার উষ্ণতার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি জলবায়ু প্যাটার্ন এটি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তখন তাকে এল নিনো বলা হয়। এর ফলে বৈশ্বিক বায়ুর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।
চলতি বছরের জুন ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের উষ্ণতম জুন মান। উষ্ণতার দিক থেকে এই মাসে ১৭৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে যায়। মাসটিতে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শিল্প যুগের আগের তুলনায় জুনে তাপমাত্রা বেশি ছিল এক দশমিক ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত মে মাসে সমুদ্রের গড় উষ্ণতা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। ২০১৬ সালের পর এই মাসটিতে সমুদ্রের তাপমাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে উত্তর আটলান্টিকের তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড্যানিয়েলা শিমিদট বলেন, ‘আটলান্টিকের এই অংশে এতো তাপমাত্রা আমরা আগে দেখেনি। আমি এরকম আশা করিনি।’