মাসুদ পথিকের একগুচ্ছ কবিতা
ইনবক্স
আর যতোই তুমি বলো, ইনবক্স ভালো নয়!
জেনো, ইনবক্সেই জীবন থাকে এবং ক্লোরো-ফিল
আউটবক্সে সমাজ তোমার; মেকি ও গোঁজামিল
ট্যাবু টোটেমের বোয়াল থাকে, চেপে রাখা ঝিলমিল
আমায় শুধু টানে গহীন ইনার এবং মনের বোরো-বিল
ধান ফলাবো, গান ফলাবো, আর কত দেহের জোড়া তিল
ইনবক্সেই বিলীন হবো, মাটির সুধায়, হবো-রে শামিল!
আজ অকস্মাৎ! এ কী!
ভাষাবিজ্ঞানের শেষ ক্লাসে বসে থাকতে দেখি,
গায়ে তাদের বাক্যের মতো পেঁচানো কুয়াশা চাদর
হাতে শব্দের নয়টি চুড়ি
পায়ে অক্ষরের ইনিগমা নূপুর
চুলে বর্ণের বর্ণিল মালা
তবুও হতদরিদ্র পৌষ ও মাঘ এই দুটি বোন
সিঁথিতে সিঁদুর নেই মানে আজও বিবাহ হয়নি তাদের!
খুব অনাথ অবস্থায় ফেলে এসেছিলাম পণ্ডিত মশাইয়ের
গ্রামে
যে পথে গন্তব্য-মুখো নদী ফেলে গেছে প্রিয় পালক
এই নদী পাখির মতো বাতাসেও টানা হিম শুনেছি
কাঁপাকাঁপা দেহ নিয়ে সেই-যে দাঁড়াতো এসে পাশে, অশ্বত্থ তলে
এই যে ভারবাল পাঠশালা আমি তার শেষ বেঞ্চির ছাত্র!
আর তারা শীতের জমজ মেয়ে, খুবই যৌনতা মাখা
গ্রামার বইয়ে দুটি বাক্যের নদী কুয়াশায় মোড়ালো ডানা
ফলে খুব ভোরে কেঁপে কেঁপে যায় এ-ধরা
পাঠশালায় বেত্রাঘাত করে নিমাই পন্ডিত, কেননা
আমরা দুষ্টু, মুখ চেপে হাসি, ক্লাসে বসে,
তিনি পৌষ ও মাঘের কোমল স্তনে হাত দেয় বলে
যদিও আমরা সমাসপাঠের ফাঁকে আলাপ করতাম এই যে,
পন্ডিত মশাই! সে নাকি খোজা? বা ধ্বজ ভঙ্গ!
তবুও, এই সমাসের নামে সম্পর্কের যোনিতে
তিনি গুজে দিতেন হাইফেন
যা আমরা চুপিচুপি পাটখেতে খসিয়ে আসতাম রোজই;
এরও থাকতে পারে ভিন্ন কোনো ভাষা
পোঁতা
জেনেছি ভেতরে ঢুকে
সবই গেছে চুকেভুকে
দেহ মানে মাটির দুপাড়
মন বলে কিছু নেই তার
মাঝখানে নদী খরস্রোতা
জলে কী-গো কান্না পোঁতা?
শীত
শীতের ভোরে এমনই মনে হলো, এমন
মৃত্যুর মাংসল দেহ খুব ভালোবাসে এ মন
এইযে এই যে, মনলোভা দুটি রহস্য ঢিবি
তার তরে ডুবে গেছে আমার মহৎ পৃথিবী
সকলেই জানি, কিংবা জানি না
মৃত্যু পৃথিবীর ছোটমেয়ে
আর বড় মেয়ে আমেনা; বড় হয় সংসার বেয়ে
মেজো মেয়ে সবিতা, আর এ-জীবন
জন্ম-কামে প্রতিবার গেয়ে ওঠে কেমন!
আমি খুশি, মৃত্যুকে কাছে পেয়ে
নিরালা বিছানায় কোলে জড়িয়ে
দীর্ঘ সঙ্গম মানে-কী ঘুমের আয়োজন?
শীতের ভোরে আজ চেপে ধরেছি এ দুটো ধন!