পাণ্ডুলিপি থেকে কবিতা
আবারও মায়ার টানে সূর্য ডুবে গেল—মায়ের হৃদয়ে
তাই এখন পৃথিবীতে গভীর অন্ধকার—নবান্নের কুয়াশা।
আবার আলোরা যুবতী হলে—অন্ধকার কেটে যাবে চরাচরে
সমুদ্রের যত নুন—খেলা করবে রক্তের ভেতর।
তখন আমি পাড়ি দেব যুদ্ধনদী—
নদীর ওপারে গিয়ে দেখব থরেথরে ফুটে আছে—মানুষের শব।
সেই সকল শব থেকে নিজের শবটি আলাদা করে—
নিয়ে আসবো নদীর এপারে। মায়ের কোলে।
মা তখন আমার হারিয়ে যাওয়া শবটির মুখে হাত দিয়ে বলবে :
এ আমার প্রথম প্রেমের অবৈধ সন্তান, আমার নবান্নের ধান।
***
এখন আমার মায়ের স্তনের দিকে তাকিয়ে মনে হয়
পৃথিবীর বাদুড়ই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী—
যারা আকাশে উড়তে পারে।
তাই উড়তে না পারার গভীর বেদনা বুকে নিয়ে
আনন্দ উপভোগ করি এই ভেবে—
আমি বাদুড়ের মতো জন্মান্ধ নই।
***
সামান্য প্রেমের অপরাধে আমাকে উলঙ্গ করা হলো
আর আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হলো একঝাঁক মৌমাছি।
মৌমাছির হুঁল যেন ব্যাধের বিষাক্ত তীর
তবুও আমি প্রেম থেকে একবিন্দু পিছু হাঁটিনি
কেননা এই প্রেম আমার মায়ের শিখানো বিদ্যা।
মানুষকে ভালোবাসা নিশ্চয়ই অপরাধ নয়
এর জন্য যদি আমার জীবনও দিতে হয়
তবে তাতেই সই। এ আমার মায়ের শিখানো বিদ্যা।
***
শিল্পপাখি বাবুই—
ভালোবেসে নিপুণ ঠোঁটে কাঁচা বাসা বাঁধে
আর এই বাসার নাম ভালোবাসা।
ভালোবাসার অন্ধকার ঘরে—বাবুই পুঁতে রাখে জোনাকি
জোনাকি মিটমিট আলো জ্বালে—বাবুইয়ের ভালোবাসায়।
এভাবে জোনাকি আলো জ্বালাতে জ্বালাতে—
নিজের জীবনের আলো নিবিয়ে দেয়।
এমনভাবে আমার মা, জোনাকির মতো আলো জ্বালে
আমাদের ভালোবাসার ঘরে।
***
কখনো কখনো হুলোবিড়ালদের ঝগড়ায়
মানুষের মুখের ভাষা ব্যবহৃত হয়।
এসকল ভাষার সার্থক অনুবাদক আমার মা।
বিড়ালেরা যখন গরুর মতো ঘেউ ঘেউ করে ডাকত
মা তখন সিঁদুর ঢেলে বিড়ালদের খেতে দিতেন
আর এসব নিয়ে মা-বাবার ঝগড়া লেগেই থাকত
অথচ— রাতের অন্ধকারে মা ছিল বাবার একমাত্র ওষুধ।
***
একদিন বাঁশের সাঁকো পার হতে গিয়ে
মা—খালের জলে পড়ে গেলেন।
আমি তখন মায়ের গর্ভে প্রায় নয় মাস ধরে বাস করছি।
মা সাঁতার দিয়ে তীরে ফিরবার প্রাণপণ চেষ্টা চালাল
অথচ—জলের তীব্র স্রোত মায়ের সাঁতারের বিরুদ্ধে দাঁড়াল।
মা তখন সাঁতারের ব্যর্থতা নিয়ে জ্ঞান হারাল।
অতঃপর মা আমার জলের তলে ধীরে ধীরে ডুবে যেতে লাগল
আমিও মায়ের গর্ভের জলে ধীরে ধীরে ডুবে যেতে লাগলাম
তখন আমি মায়ের গর্ভের জলে ডুবসাঁতার দিতে দিতে—
মাকে নিয়ে তীরে ফিরলাম।
তীরে ফিরে মা দ্যাখে—
অদূরেই একটি রক্তাভ ফুল আকাশ ফুঁড়ে উঠছে।
আরো পরে সে তার গর্ভে হাতে দিয়ে দ্যাখে—
আমি তার গর্ভের মাঝে নেই।
সেই থেকে আকাশের ফুলটির নাম হলো রক্তকমল।
***
খুব গোপনে কাছে ডেকে মা জানাল আমারে
নারীদের সাথে প্রেমে—তোমার হৃদয় রাখবে দূরে
যেমন করে মরণখেলায় সাপ থেকে দূরে থাকে সাপুড়ে।
তারপরে মা আরো জানাল—
মায়ের ভালোবাসা পেয়ে—আমার পিতা
কেমন করে বাঘ থেকে হয় গেল— হুলোবিড়াল।
অবশেষে বুঝলাম নারীদের প্রেমে থাকে অন্ধবিষ
তাই তারা অন্ধকারে পুরুষকে সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরে
জন্ম দেয় হাজারও বসন্তের গোলাপ বাগান।
তবুও কেন যে—শত শত গোলাপ
হৃদয়ে দুঃখ জমিয়ে কালো হয়ে ফোটে, পৃথিবীর বুকে।