পাণ্ডুলিপি থেকে কবিতা
২০ জুলাই
ঘাড় ফেরাতেই দেখি, ওদের বেঁধে নিচ্ছো শক্ত করে, পথে কত জলকাদা, রাগী হর্ন; তার চেয়ে এই অনুশাসন ভালো, রাবারের জঙ্গলে থাক, থাক ঘুমিয়ে। আবার ঘুমিয়ে পড়ি, ঘুম তো আসবে, নাকি?
সে চলে যায় তড়িঘড়ি। আমি ঢুলতে ঢুলতে বন্ধ করি দরোজা। এমনই সকাল হয়, প্রতিদিন আটকে থাকি পিচুটিতে। তবে আজ কেন বালিশের নিচে উটের কুজ; মুঠোভর্তি বালু শূন্যে উড়াই! সারারাত তো ছিল সে, পায়ের কাছে ফেলে রেখে রাতের পোশাক; আমি কোথায় ছিলাম, হে রাত্রি— ভাইবোনের মতো দুটো বাঁশে বেঁধে নিয়ে জাল, খুঁজেছি কি লুপ্তপ্রায় মাছ, অন্যের ফাঁসেও কি দিয়েছি উঁকি? জানি না, সত্যি জানি না।
মনে হলো, তার পায়ের শব্দ ডেকে আনলে ঘরে, বলতাম, আয়নায় দেখ হুক খুলে আছে ব্লাউজের; নীল নীল...
ইনসোমেনিয়া
অথচ একটাও ওষুধ নেই— পাকস্থলি থেকে লতিয়ে উঠবে ঘুমের ডালপালা,
আমি ভাবি, এইমাত্র পুনঃপুন ব্যর্থতা নিয়ে যে অটো স্টার্ট নিল,
তারও নির্ঘুম আছে—
ফুটে থাকে তারও কয়েকটি বাতি; আর আকাশের শিশুরা ‘ওই তো, ওই তো খসে গেল’— বলে আঙুল তুলে দেখায় ছোট বোনকে, মানুষের নক্ষত্র।
ওষুধ পেলে এই সব গল্প গরুর চামড়ার ভেতর
লবণ দিয়ে রাখা যেত। আর অচেনা কেউ, দূরের বা কাছের,
কোনোদিন জুতা পায়ে ইটপাথর ভেবে, আকাশে, ঠুকে ঠুকে যেত
দেবশিশুদের চোখ।
ব্লেড
হাতের শিরা ছুঁয়ে দেখি, এই স্পন্দনের নিচে মালবাহি গাড়ি
টেনে নিয়ে যায় পাথরের ঘোড়া, যাদের খোঁদাই শেষে বাটালিসমেত
ভাস্কর উধাও, হয়তো অপযশ হয়ে গেছে, ভেবে একটু অপেক্ষা করে
সমুদ্রে নামার।
আমি কেন বারবার এই ইস্পাতের প্রিয়তার কথা ভাবি
কেন মোড়ক খুলে চুমু খাই শিশুযোনি
এই স্পন্দনের নিচে
দড়ি বাঁধা একটি ঝড় নিশ্চুপ ঘুমায়
মনীষা
আমার চোখে দুটো টর্চ ঠেসে দিয়েছি। ফলে এই রাত্রি পায়ের পাতার ওপর ভ্রাম্যমাণ। গলির মুখে দীর্ঘ পাম গাছ চেনা আঁধার ফুঁড়ে উঠে গেছে, যেন আমি কাঁধে হাত রাখবো বলব— চলো ভাই একসাথে।
রাত্রি, তুমি কি শরীর? লাবণ্যপ্রভার ছদ্মবেশ? নাকি আমাকে নিয়ে যাবে অন্য কোনো প্ররোচনায়?
দূরে উল্টে আছে কুমিরের তলপেট, যাকে আপাতত টি-স্টল ভেবে খানিকক্ষণ বসি।
চারপাশে শিশ্ন উঁচানো খদ্দের আর ক্লান্ত বেশ্যা-ভর্তি এই রাত আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে, যেন আমি এসেছি কপর্দশূন্য;
আমিও ঠিক সন্দিগ্ধ হই। তোমাকে পাবার পিপাসা এখনো আছে, এখনো বেলপাতা ছিঁড়ে দিতে পার চোখে, বা নিজের করতল, যদিও পৃথিবীতে তোমার সংকেত নেই, বা যা আছে তা লোকশ্রুতি— সেইসব নিয়ে আমি কী করি?
আমি ব্রেইল শিখেছি তোমার শরীর পেয়ে; তুমি নেই, অনেক অক্ষর রয়েছে পাঠহীন। আর এসব নারী-পুরুষ সামান্য মাংসের দোকান খুলে বেচতে চায় মনীষা!
বাড়ি
বাড়িটা হঠাৎ কেঁপে ওঠে
ভেতরে এক বিদুষী খুলবে তার রঙিন মনীষা
আমি ১৯ টুকরো থেকে জেগে উঠি
বলি, ‘তুমি কি কামসূত্রের প্রভাষক?’
সে নাচায় ভ্রু
আমার শঙ্কা বাড়ে
স্বৈরিণীর পাঠ্যক্রমে দোর-জানালা ছিটকে যেতে যেতে চেয়ে দেখি
নিসীম নীলে একঝাক পায়রা যেন উড়ে যাচ্ছে এই গ্রহ ছেড়ে
আমি আঙুল তুলে দেখাব যে
দুহাত তো মহাবলয় নিয়ে ভলিবল খেলে
এই গৃহ এক শূন্য মঞ্চ
পিঠের নিচে ঘাস জলকাদা
শান্ত হলে সে কলাবতীর ঝোঁপ হয়ে দাঁড়ায়
খোলা পিঠ বেয়ে নেমে গেছে তার দীঘল বেণী
প্রেম সে এইভাবে জানে
করোটির ভেতর পুরুষযন্ত্র শ্বাসমূলের মতো ঊর্ধ্বমুখী
যে বাড়িটাকে সে আড়াল ভাবে
সূর্যের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে
আর ১৯ হাজার চোখে করমচা পাকে
যার যার হাতের মুঠোয় নিজের যন্ত্র খাড়া রেখে রেখে তাকে খোঁজে
যত্রতত্র সে তার মনীষা খোলে ফুরন্ত পুরুষের তলায়
তার পাঠ্যক্রমে কোনো সুহৃদ নেই
সে এখন এক বাড়ির তলায় পুঁতে রেখেছে তার হাড়
যেন সে লাফিয়ে না ওঠে পুরুষে
আর বাড়িটা হয়ে না যায় উড়ন্তযান
[ জাহিদ সোহাগ। জন্ম ১০ মার্চ ১৯৮৩। প্রকাশিত কবিতার বই— আর্তনাদও এক বায়বীয় ঘোড়া, অসুখের শিরোনাম, দুপুর, ব্যক্তিগত পরিখা। সম্পাদনা— তিন বাঙলার শূন্যের কবিতা।]