আজারবাইজানে ব্যারিস্টারি পড়তে গিয়ে খুন হলেন রাজশাহীর রিয়া
দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া রিয়া ফেরদৌসীর স্বপ্ন ছিল ব্যারিস্টার হবেন। ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজ থেকে আইন বিষয়ে অনার্স শেষ করে স্বপ্ন পূরণের আশায় পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর আজারবাইজানে। সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন বাকু বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে।
গতকাল বুধবার আজারবাইজান সময় সকাল ১০টায় রিয়া ফেরদৌসীকে (৩৩) খুন করে দুর্বৃত্তরা।
পড়ালেখার খরচ জোগাতে খণ্ডকালীন চাকরি নিয়েছিলেন একটি রেস্টুরেন্টে। বাড়িতে দরিদ্র মা-বাবা চেয়ে ছিলেন মেয়ের অপেক্ষায়। ভেবেছিলেন ব্যারিস্টার হয়ে মেয়ে ফিরে এলে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে। তাদের সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে।
যে রিয়া ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফেরার স্বপ্ন দেখেছিলেন, এখন তার মৃতদেহ পাবে কি না পরিবার, তারই কোনো নিশ্চয়তা নেই।
রিয়া ফেরদৌসী রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা সদরের কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের আবু বক্করের মেয়ে। রিয়া ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। মেয়ের খুনের খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছে পরিবারের সদস্যরা।
বাবা আবু বক্কর বলেন, ‘অনেক কষ্টে আমাদের সংসার চলে। ছোট থেকেই মেয়েটার একটাই স্বপ্ন ছিল, সে ব্যারিস্টার হবে। আর আমাদের সব কষ্ট দূর করবে। এখন তো সব শেষ। আমি গরিব মানুষ। খুনিকে শনাক্ত করা বা বিচার পাওয়ার কোনো আশা নেই। তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাই, অন্তত মেয়ের লাশটা যেন দেশে এনে আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়।’
পরিবারের দাবি, আজারবাইজানের পুলিশ রিয়া হত্যার বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করছে। তবে কী কারণে বা কারা রিয়াকে খুন করেছে, সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি তার পরিবারের লোকজন।
আজারবাইজানে বাংলাদেশি দূতাবাস নেই। ইরানে অবস্থিত বাংলাদেশের কনস্যুলেট থেকে রিয়া হত্যার বিষয় নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নিহত রিয়ার ভাই ফরমান আলী বলেন, ‘রিয়া ঢাকার একটি কলেজ থেকে কয়েক বছর আগে অনার্স শেষ করেছে। এরপর ব্যারিস্টারি পড়তে গত বছর আজারবাইজানের বাকু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। লেখাপড়ার পাশাপাশি সেখানকার গাঞ্জা শহরে একটি রেস্টুরেন্টে খণ্ডকালীন চাকরি নেয় সে। সেখানকার লোকের মাধ্যমে শুনেছি ওই রেস্টুরেন্টে যাতায়াতের সময় স্থানীয় কিছু বখাটে যুবক তাঁকে প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্ত করত। তাদের কথায় রাজি না হওয়ায় গতকাল সকালে দিকে রিয়াকে তুলে নিয়ে যায় তারা। পরে তার হাত-পা ভাঙা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে কীভাবে, কারা বা কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা এই মুহূর্তে আমরা বলতে পারছি না।’
এ বিষয়ে জানতে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখানকার একটি মেয়ে বিদেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন—এমন কথা শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসনিকভাবে লিখিত কোনো তথ্য বা ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ আমাদের কিছুই জানায়নি।