আদালতে কেঁদে ওসি মোয়াজ্জেম, ‘আমি অনেক সাজা পেয়েছি’

‘এই মামলায় আদালত যে সাজা দেবেন, আমি এর চেয়ে বেশি পেয়ে গেছি। রংপুরে আমাকে যখন বদলি করা হয়, তখন রংপুরবাসী আমার বিরুদ্ধে জুতা মিছিল করে। আমার ছেলে এখন স্কুলে যেতে পারে না। আমার পরিবার এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমার চিন্তায় আমার মা বিছানায় অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। প্রিন্সিপাল সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেপ্তার করার জন্য নুসরাতসহ তিনজনের ভিডিও করি। এতে আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। আমি নির্দোষ। আমি আপনার কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।’
এ কথা বলেই আদালতে কাঁদতে থাকেন ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস-শামস জগলুল হোসেনের আদালতে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে এ কথা বলেন।
ওসি মোয়াজ্জেম আরো বলেন, ‘সামাজিক, রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন আমার বিরুদ্ধে এ মামলা করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসতে এ মামলা করেন তিনি।’
ওই সময় ওসি মোয়াজ্জেমের কথা বিরোধিতা করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘সারা দেশের ওসিরা যেন নারীদের সম্মান করেন, এই জন্য আমি মামলা করেছি।’
ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেম নির্দোষ বলে আদালতে ন্যায় বিচার চেয়েছে। লোকটার মানসম্মান ও চাকরি থাকবে না। অসহায় বিধায় এভাবে কান্না করেছেন।’
ফারুক জানান, আগামী ২০ নভেম্বর এ মামলার যুক্তিতর্ক শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। এরপর মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী নুসরাত জাহান রাফির মা। পরে সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে যাওয়ার পর সোনাগাজী থানার ওসির কক্ষে হয়রানির শিকার হতে হয় নুসরাতকে। নিয়ম না মেনে জেরা করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তাঁর আইনজীবী ছিলেন না।
গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আগমুহূর্তে মিথ্যা কথা বলে নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় দুর্বৃত্তরা। মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ওই দিন নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃত্যু হয়।
এদিকে গত ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলায় ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ আসামির সবার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোনাগাজী থানায় মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল সাইবার ট্রাইব্যুনালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
গত ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।