কক্সবাজার সৈকতে বিশাল ‘প্লাস্টিকের দৈত্য’
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেখা যাচ্ছে বিশাল আকৃতির প্লাস্টিক দৈত্য। উচ্চতা ৩৮ ফুট, চওড়াও নেহায়েত কম না, ১৪ ফুট। ভয় না পেয়ে সৈকতে আসা মানুষ উৎসহ নিয়ে দেখছে তাকে। গায়ে ঝুলছে চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল, ভাঙা বালতি, চেয়ার, বলসহ নানা ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্য। ১৬ জন স্বেচ্ছাসেবক গত সাত দিন ধরে এ দানব তৈরি করেছেন। উদ্দেশ্য—‘প্লাস্টিক মানুষ ও প্রকৃতির জন্য হুমকি’ বিষয়টি তুলে ধরে সচেতনতা সৃষ্টি। এতে ব্যবহার করা হয়েছে ২০ বস্তা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্লাস্টিক বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় তা পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকে মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণী রয়েছে হুমকিতে। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে গেলে দেখা মিলবে এই দানবের। সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ রোধে জনসচেতনতা তৈরিতে এ প্লাস্টিক দানব তৈরি করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
ঢাকা থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাদিরা কানন বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ কর্মসূচি চালু রয়েছে। কক্সবাজারে এটি চালু হওয়াতে খুবই ভালো লাগছে। প্লাস্টিক বর্জ্য যে আসলে সমুদ্রের ওপর দানবীয় অত্যাচার করছে তা প্রমাণ করতে হবে। প্লাস্টিকের দানব থামাতে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।’
প্লাস্টিকের দানব তৈরির মূল পরিকল্পনাকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী আবির কর্মকার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করতে এরই মধ্যে ২০ বস্তা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। এসব পরিত্যক্ত পণ্য কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। গত সাত দিন ধরে দিনরাত কাজ করে এ দানব তৈরি করেছি।’
আবির আরও বলেন, ‘প্লাস্টিকের দানবটির উচ্চতা ৩৮ ফুট ও প্রস্থ ১৪ ফুট। আমি, শুভ্র বাড়ৈ, নির্ঝর, সাব্বির, বিদ্যানন্দের আট জন স্বেচ্ছাসেবক ও চারজন কাঠমিস্ত্রি মিলে প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছি। মূলত মানুষের কাছে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এটি তৈরি করা হয়।’
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘কক্সবাজার সৈকতে প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। তখন সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ-প্রতিবেশ হুমকিতে পড়ে। হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে সাগরের নীল জল। প্লাস্টিক বর্জ্যে বিপন্ন হচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী।’
দীপক আরও বলেন, ‘মারা পড়ছে গভীর সমুদ্র থেকে ডিম পাড়তে আসা মা কচ্ছপ, দ্বীপের চতুর্দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রবাল-শৈবাল। এমন অবস্থায় দ্বীপের প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এটা চলমান থাকা প্রয়োজন। যাতে আগত পর্যটকরা বুঝতে পারে, তারা যেটা করছেন সেটা ঠিক নয়।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘এই দানব তৈরির মাধ্যমেই বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসন সমাজকে একটি বার্তা দিতে চায়, প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলে যেভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তা ধীরে ধীরে দানবে রূপ নিচ্ছে।’
আর এ দানবই পরবর্তীকালে মানবসমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এটি আগামী দুই মাস সমুদ্র সৈকতে থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
আয়োজকরা জানান, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের বিষয়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের একদল স্বেচ্ছাসেবী গেল কয়েক দিন ধরে সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রথম দিনে বর্জ্য সংগ্রহে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। মঙ্গলবার কর্মসূচির প্রথম দিন অন্তত ৪০০ পরিবারের লোকজন চার মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য দোকানে নিয়ে আসেন।
বিনিময়ে চার লাখ ২০ হাজার টাকার চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ, লুঙ্গিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে গেছেন। প্রতি মাসে একবার দোকানে এসে লোকজন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতে পারবেন।