কমলাপুরে ছিনতাই নিয়মিত, জানেন না ওসি!

গত বুধবার রাত ৮টা। কমলাপুর রেলস্টেশন ও মুগদা বাসস্ট্যান্ডের সংযোগস্থলের বহুল ব্যবহৃত ফুটওভারব্রিজ। হকারেরা বিক্রি করছেন মুঠোফোনের হেডফোন, জায়নামাজের পাটি ও চার্জার। মিনিট ১৫ পরে হঠাৎ দুই কিশোরকে দৌড়াতে দেখা গেল। পিছু নিয়েছেন আরেকজন। কিন্তু ওই দুই কিশোরকে ধরতে পারলেন না তিনি। কারণ, ততক্ষণে ওই দুজন ওভারব্রিজের কমলাপুর রেলওয়ে থানার পাশের সিঁড়ি দিয়ে নেমে হাওয়া।
হাঁপাতে হাঁপাতে কিশোরদের পিছু নেওয়া মধ্যবয়স্ক মাহমুদ আলী (৫০) থমকে গেলেন। আনমনে বলছিলেন, ‘আমার ছেলের দেওয়া চেইনটিও নিয়ে গেলি…!’ এই প্রতিবেদক তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে মাহমুদ আলী এনটিভি অনলাইনকে জানালেন, ‘গলায় স্বর্ণের চেইন ছিল। ছেলে মুজাহিদ সৌদি আরব থেকে পাঠিয়েছিল সেই চেইন। দুই ছিনতাইকারী চেইনটি টান দিয়ে নিয়ে গেছে।’
কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে কাঁদছিলেন মাহমুদ আলী। বলেন, ‘একটা কাজে গিয়েছিলাম মুগদা বাসস্ট্যান্ডে। কাজ শেষে বাসার দিকে যাচ্ছি। এমন সময় ব্রিজের ওপর এই ঘটনা। কার কাছে গিয়ে অভিযোগ দেব? ছয় মাস আগে আমার বৌমার ব্যাগ আর মোবাইল ছিনতাই হয়েছিল এই ব্রিজের ওপরই। জিআরপি থানায় গিয়ে বললে তারা জানান, কীভাবে খুঁজবে ছিনতাইকারীদের? তাই এবার আর যাব না। থানায় গিয়ে লাভ হয় না।’
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াত খানিকটা কমে আসে। রাতজুড়ে কিছু যৌনকর্মী সেখানে অবস্থান নেয়। এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলেন রাকিব। ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মের ট্রেনে বসে কথা বলছিলেন মুঠোফোনে। হঠাৎ একজন এসে তাঁর মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। ট্রেন থেকে নেমে আর কাউকে খুঁজে পাননি। রাকিব বলেন, ‘কয়েক দিন আগে একবার আমার পাশের সিটে বসা এক যাত্রীর গলার চেইন টান দিয়ে নিয়ে চলে যায় এক ছিনতাইকারী। আজ এই ঘটনা ঘটল।’
কমলাপুরে ভ্রাম্যমাণ নারী বকুল (৩০)। ১৪ বছর ধরে তিনি এখানেই থাকেন। বকুল বলেন, ‘আগে বেশি ছিনতাই হতো, এখন একটু কম। তবে মাঝেমধ্যেই হয়। এই তো কয়েক দিন আগে কমলাপুরের সিএনজি স্টেশন থেকে এক নারীর ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে গেছে চোর। শুধু এইডা না, রিকশা থেকেও টান দিয়ে মাঝেমধ্যেই ছিনতাই হয়। বেশি ছিনতাই হয় ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। ওভারব্রিজের ওপরও ছিনতাই হয়। ওখানে দেহ ব্যবসাও চলে। অধিকাংশ নারীই কমলাপুরের ভ্রাম্যমাণ বাসিন্দা।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিব-উল-হোসেন বলেন, ‘এখন আর ছিনতাই হয় না কমলাপুরে। সিসিটিভির ক্যামেরা আছে। প্রশাসনও সব সময় তদারক করে। ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই।’
রাকিবের মুঠোফোন ছিনতাইয়ের কথা বললেও ওসি বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না ছিনতাইয়ের।’
কয়টি ক্যামেরা আছে—জানতে চাইলে ওসি রকিব-উল-হোসেন বলেন, ‘পুরো স্টেশনে মোট দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে, যার একটি থানার পাশে গেছে। তবে আরো ৩২টি ক্যামেরা বসানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
তবে ঢাকা রেলওয়ে থানার সাবেক ওসি ইয়াসিন মজুমদার ফারুক কিছুদিন আগে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি তখন নতুন এখানে জয়েন করি। ছিনতাইকারীরা আমাকে ফোনে ঘুষ দিতে চেয়েছিল। যাতে ছিনতাই করলে আর ধরা পড়লে আমি কিছু না বলি। কমলাপুরের রেলস্টেশনের ছিনতাইয়ের সিন্ডিকেট কতটা বড়, তা ওই দিনের পর আমার আর বুঝতে বাকি ছিল না।’