‘কারেন্ট পোকা’য় ভেস্তে যেতে বসেছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন

দিগন্তজোড়া মাঠে পাকতে শুরু করেছে আমন ধান। কার্তিকের শেষে হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে ধানের সোনালি শীষ। সেইসঙ্গে দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর ১০ থেকে ১২ দিন পরই কৃষকরা ঘরে তুলবেন সোনালি ফসল; ভরে যাবে গোলা, মুখে ফুটবে হাসি। কিন্তু কয়েক মাস ধরে নিবিড় পরিচর্যার পর শেষ মুহূর্তে এসে ভেস্তে যেতে বসেছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। ‘কারেন্ট পোকা’র আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষক।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ পোকার আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। অনেক চেষ্টা করেও এ সমস্যার প্রতিকার পাচ্ছেন না কৃষক। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে। বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে এ খবর পাওয়া গেছে।
‘কারেন্ট পোকা’ প্রসঙ্গে কৃষকরা জানান, এটা এমন এক জাতের পোকা, যার মাধ্যমে কোনো ফসলের মাঠ আক্রান্ত হলে কয়েক দিনের মধ্যে পুরো ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। কারেন্টের মতো দ্রুতগতির কারণেই এটি কৃষকদের কাছে ‘কারেন্ট পোকা’ নামে পরিচিত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বল্লা, কানাইরালী, শিওরদহ, বাঁকড়া ও আলীপুর মাঠে অনেক ধানক্ষেতে ‘কারেন্ট পোকা’ আক্রমণ করেছে।
বল্লা গ্রামের চাষি বজলুর রহমান, কামাল, জাবেদ, মহাসিন মিলন, মুক্তার, হাসান ও বাবু সরদারের রোপা আমনের ক্ষেত ‘কারেন্ট পোকা’য় আক্রান্ত হয়েছে। তাঁরা জানান, আক্রান্ত ধানক্ষেত দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে পেকে গেছে। ধানের শীষ ও গাছ সম্পূর্ণ সোনালি বর্ণ ধারণ করেছে। কিন্তু আক্রান্ত গাছের ধানের ভেতরে কোনো দানা নেই।
একই গ্রামের আজাহারুল ইসলাম জানান, তিনি ১৫ বিঘা জমিতে এবার রোপা আমনের চাষ করেছেন। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আগামী ১০ থেকে ১২ দিন পরই ধান কাটা শুরু করবেন। এ অবস্থায় আশপাশের জমিতে ‘কারেন্ট পোকা’র আক্রমণ দেখে আগেভাগেই নিজের জমিতে বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করছেন।
বাঁকড়া বাজারের কীটনাশক বিক্রেতা হামিদুর রহমান টিক্কা জানান, আলীপুর ও বাঁকড়া গ্রামের মাঠে কারেন্ট পোকার আক্রমণ এত বেশি যে তিনি প্রতিষেধক ওষুধ সরবরাহ করে পেরে উঠতে পারছেন না।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাশ বলেন, ‘এটা মূলত আবহাওয়াজনিত পোকার আক্রমণ। ‘কারেন্ট পোকা’র হাত থেকে রেহাই পেতে আলোর ফাঁদের মাধ্যমে পোকা নির্ণয় করে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।’
ঝিকরগাছায় ‘কারেন্ট পোকা’র আক্রমণ এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে দাবি করে দীপঙ্কর জানান, বিষয়টি নিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।