গ্রামীণফোনের কাছে পাওনার মীমাংসা আদালতেই হবে, রোববার আদেশ

গ্রামীণফোনের কাছে পাওনা প্রায় ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা দাবি নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) করা আবেদনের ওপর আদেশ পিছিয়ে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আগামী রোববার আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজ সোমবার আদেশের জন্য দিন নির্ধারিত থাকলেও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ নতুন করে এ দিন দিয়েছেন।
তবে আদালত বলে দিয়েছেন, ‘আদেশের আগে এই সময়ের মধ্যে এ বিষয় নিয়ে গ্রামীণফোন আদালতের বাইরে মীমাংসার জন্য অন্য কোনো ফোরামে (আরবিট্রেশনের জন্য) যেতে পারবে না।’ অর্থাৎ আদালতের বাইরে বিষয়টি মীমাংসার কোনো সুযোগ নেই।
আদালতে আজ গ্রামীণফোনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন ও শেখ ফজলে নূর তাপস। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মেহেদী হাসান চৌধুরী, শরীফ ভূঁইয়া ও আইনজীবী তানিম হোসেইন শাওন। অন্যদিকে বিটিআরসির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, মুরাদ রেজা ও খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
পরে আদালতের বরাত দিয়ে খন্দকার রেজা-ই-রাকিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেহেতু (বিটিআরসি) পাওনা নিয়ে নিষ্পত্তির বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পেন্ডিং আছে সেহেতু এটি অন্য কোনো মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করতে নিষেধ করেছেন আপিল বিভাগ।’ তিনি বলেন, ‘আদালতের বাইরে অন্য কোনো মধ্যস্থতার মাধ্যমে সালিশ (আরবিট্টেশন) করা যাবে না।’
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর বিটিআরসির পাওনা টাকার মধ্যে ২০০ কোটি টাকা শর্ত সাপেক্ষে দিতে রাজি হয় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। সেদিনের শুনানি শেষে মামলায় আদেশের জন্য আজকে সোমবার দিন ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ।
গত ১৪ নভেম্বর ব্যবসায় বাধা দূর করতে গ্রামীণফোনের (জিপি) দেওয়া শর্ত মানলে পাওনা ২০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) দেওয়ার কথা আদালতকে জানায় সংস্থাটি। তবে গ্রামীণফোনের এই প্রস্তাব মনেনি রাষ্ট্রপক্ষ। তারা পাওনা টাকা ১২ হাজার ৫৮০ কোটির পুরোটাই দাবি করে।
সেদিন গ্রামীণফোনের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস আদালতে বলেন, ‘গত ৩ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে আমাদের ব্যবসার বাধা দূরীকরণে কিছু শর্ত দিয়েছি। তারা শর্তগুলো মানলে আমরা (গ্রামীণফোন) ২০০ কোটি টাকা দিতে রাজি আছি।’
তবে বিটিআরসির পক্ষে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেছিলেন, বিটিআরসি গ্রামীণফোনের কাছে পাওনা ১২ হাজার ৫৮০ কোটির পুরোটাই চায়। গ্রামীণফোনের কাছ থেকে যে প্রস্তাব এসেছে, তাতে তাঁরা রাজি নন।
এর আগে গত ২৪ অক্টোবর ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার মধ্যে গ্রামীণফোন আপাতত বিটিআরসিকে কত টাকা দিতে পারবে, তা জানাতে বলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
গত ১৭ অক্টোবর গ্রামীণফোনের কাছে বিটিআরসির পাওনা ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা আদায়ের ওপর দুই মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি আবদুল হাকিম ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে বিটিআরসি।
এর আগে প্রায় ২৭টি খাতে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা দাবি করে গ্রামীণফোনকে গত ২ এপ্রিল চিঠি দেয় বিটিআরসি। এই চিঠির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অর্থ আদায়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গ্রামীণফোন নিম্ন আদালতে একটি মামলা করে। এরপর গত ২৮ আগস্ট নিম্ন আদালত গ্রামীণফোনের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে ওই নামঞ্জুর আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে গ্রামীণফোন। পরে ওই আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করে দুই মাসের জন্য গ্রামীণফোনের কাছ থেকে টাকা আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।