ঝুঁকি না জেনে সোশ্যাল মিডিয়ার বিশ্বে ঝাঁপ দেবেন না : আইজিপি
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে। সাইবার ঝুঁকি না জেনে সোশ্যাল মিডিয়ার বিশ্বে ঝাঁপ দেবেন না কেউ।’
আজ মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তরের হল অব ইন্টেগ্রিটিতে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিগণ, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিস থেকে সেবা পাওয়া কয়েকজন নারী উপস্থিত ছিলেন।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সাইবার ওয়ার্ল্ড আমাদের জীবন সহজতর করেছে। পাশাপাশি এ কথাও সত্য টেকনোলজি ব্যবহার করে অপরাধীরা এর সুযোগ নিয়ে নানা অপরাধ করছে। এখন শুধু শহরের মানুষ নয়, গ্রামের মানুষও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছে। এতে করে অনেকে সাইবার বুলিং বা সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে। শুধু ব্যক্তি বা সমাজ নয়, অনেক সময় রাষ্ট্রও এর ভিকটিম হচ্ছে।’
আইজিপি বলেন, ‘নারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। এবং তা দিন দিন বাড়ছে। একজন নারী যখন সাইবার হামলার শিকার হয়, তখন ওই নারী এবং তার পরিবারে কী বিপর্যয় নেমে আসে তা ভুক্তভোগীই জানে। আমরা সাইবার অপরাধের শিকার নারীদের সেবা দেওয়ার জন্য এ সার্ভিস চালু করেছি। ইতোমধ্যে এ সার্ভিসের মাধ্যমে অনেক নারীকে সেবা প্রদান করা হয়েছে।’
ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোনো ব্যক্তিকে অ্যাকসেস না দেওয়ার আহ্বান জানান ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বল্প পরিচয়ের সূত্র ধরে কারো সঙ্গে বাইরে বের হলে এর ঝুঁকিও রয়েছে।’ এ সময় ড. বেনজীর আহমেদ পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসের মাধ্যমে ভুক্তভোগী নারীদের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য ইউনিটকে ধন্যবাদ জানান।
সে সময় সেখানে উপস্থিত থাকা ভুক্তভোগী নারীরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানান, একজন মেয়ে বা নারী যখন সাইবার হামলার শিকার হয়, তখন ওই পরিবারের কী অবস্থা হয় তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসে সাপোর্টের জন্য যোগাযোগের পর তারা অনেক দ্রুত সেবা পেয়েছেন এবং তাদের সমস্যার সমাধান হয়েছে। এ সার্ভিস থেকে শুধু আইনি সহায়তাই নয়, তাদেরকে মানসিক সহায়তাও দেওয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। সম্পূর্ণ নারী পুলিশ পরিচালিত এ সার্ভিসে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১৭ হাজার ২৮০ জন ভুক্তভোগী নারী যোগাযোগ করেছেন। যার মধ্যে ১২ হাজার ৬৪১ জন নারী ভুক্তভোগী হয়রানির শিকার হয়ে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে আট হাজার ২২১ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রযুক্তিগত ও আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
প্রাপ্ত অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে হয়রানি করার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি যা মোট অভিযোগের ৪৩ ভাগ।
নারীর প্রতি সাইবার স্পেসে অপরাধের ধরন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভুয়া আইডি থেকে মেসেজ/তথ্য প্রকাশ করে হয়রানি, আইডি হ্যাক করে হয়রানি, ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং, মোবাইলে কল করে হয়রানি, আপত্তিকর ছবি/ভিডিও/মেসেজ পাঠিয়ে হয়রানি ইত্যাদি।
ভুক্তভোগী নারীদের বয়স পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের শতকরা ১৬ ভাগের বয়স ১৮ বছরের কম। শতকরা ৫৮ ভাগ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী। ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ভুক্তভোগী শতকরা ২০ ভাগ এবং ছয় ভাগ ভুক্তভোগীর বয়স ৪০ বছরের বেশি।
অভিযোগগুলোহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ ভুক্তভোগী পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ হিসেবে মামলার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে আগ্রহী হননি। তারা শুধু আইডি বন্ধ করে বা মেসেজ ডিলিট করে সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ১২ ভাগ আইনগত ব্যবস্থা হিসেবে জিডি বা মামলা করেছেন যার মধ্যে মাত্র ১৩ ভাগ ভুক্তভোগী অভিযুক্তের পরিচয় ও অবস্থান শনাক্ত করার পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।