ট্রাক-কাভার্ডভ্যান শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার

নয় দফা দাবি বিবেচনার আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদ। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ধানমণ্ডির বাসায় সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত চালকরা লাইসেন্স হালনাগাদ করার সুযোগ পাবেন। এছাড়া গাড়ির ফিটনেস ও দৈর্ঘ-প্রস্থের জটিলতা বিষয়ে আগামী সাত মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে বসে মালিক-শ্রমিকরা ঠিক করে নেবেন।
বৈঠকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম ও বিআরটিএ কর্মকর্তারা, আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘট আহ্বানকারী বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান, যুগ্ম আহ্বায়ক মকবুল হোসেন, সদস্য সচিব তাজুল ইসলামসহ অন্তত ১০ জন এবং বাস মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা তাদের নয় দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করেছি। লাইসেন্স, ফিটনেস সনদ আপডেটের জন্য তাদের ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তারা আইন সংশোধনের যে দাবি জানিয়েছেন সেটা বিবেচনার জন্য সুপারিশ আকারে আমরা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তারা এগুলো বিবেচনা করে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করবে।
গত ১ নভেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করে সরকার। তবে নতুন আইনে মামলা ও শাস্তি দেওয়ার কার্যক্রম মৌখিকভাবে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গত বৃহস্পতিবার সেই সময়সীমা শেষ হয়। রোববার ওবায়দুল কাদের জানান, ওইদিন থেকেই আইন কার্যকর শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই ঘোষিত-অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট ডাকতে শুরু করে পরিবহন সংগঠনগুলো। এরপর মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বুধবার সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
মঙ্গলবার বিকেলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে বিআরটিএ কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকেও নতুন আইন কার্যকর না করার দাবি জানান পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা।
বুধবার রাজধানীসহ সারা দেশে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ হয়ে অচল হয়ে পড়ে। চরম দুর্ভোগে পড়ে লোকজন।
বুধবার আইনটি স্থগিত চেয়ে নয় দফা দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পেশ করে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এরপর রাত ৯টার দিকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ নয় দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে থাকা বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক শেষে জানানো হয়, যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনা করা হবে এমন আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন পরিবহন মালিক শ্রমিকরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আাসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘যে লাইসেন্স দিয়ে তারা গাড়ি চালাচ্ছিলেন, সে লাইসেন্সটি বহাল থাকবে। আগামী জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হবে। মিডিয়াম লাইসেন্স থেকে হেভি লাইসেন্স করতে পারেনি, কিংবা লাইট থেকে মিডিয়ামে নিতে পারেনি এজন্য জটিলতা লেগেছে। অবৈধ লাইসেন্সের প্রশ্নই আসে না। অবৈধ লাইসেন্স যেগুলো আছে সেগুলো দিয়ে তারা কাজ করবেন না বলে প্রমিজ করেছেন।’
পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা নেতারা বলেন, গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক করার জটিলতা এবং নতুন আইনটির অসঙ্গতি থাকায় তারা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছেন (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) এবং এজন্য আজকে আমাদের কর্মসূচি ছিল, কর্মবিরতি ছিল শ্রমিকদের-মালিকদের, এই কর্মবিরতি আমরা মন্ত্রীর কথায় প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিচ্ছি।’
বৈঠকে পরিবহন শ্রমিক নেতা তালুকদার মো. মনির বলেন, ‘আমরা কর্মবিরতি দেওয়ার পক্ষে ছিলাম না। আমাদের শ্রমিকরা আমাদের অনুমতি ছাড়াই গাড়ি বন্ধ কইরা দিছে বিধায় আমরা কর্মসূচি দিয়ে শ্রমিকদের ঠেকাইয়া রাখছি।’