ট্রেনের টিকেটের টাকা ফেরত দিচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ!

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। কমলাপুর রেল স্টেশনের টিকেট কাউন্টার জমজমাট। দেখে মনে হবে ঈদের অগ্রিম টিকেট নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছে শতাধিক যাত্রী। অথচ ঘটনা ঘটে চলেছে উল্টো। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা টিকেট নিচ্ছে না। বরং ফেরত নিচ্ছে টিকেটের টাকা! রেল কর্তৃপক্ষও কোনো টাকা না কেটেই পুরো টাকা ফেরত দিচ্ছে।
আজ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় রংপুর এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে আগুন লেগে পুড়ে যায় ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি। ফলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে যায় এমন সব ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে এখনো। কখন ট্রেন চালু হবে সেটাও জানে না কর্তৃপক্ষ। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে যাত্রীদের টিকেটের টাকা ফেরত দেওয়ার।
তবে ট্রেন টিকেটের টাকা ফেরত নেওয়াকে কেন্দ্র করে টিকেট কাউন্টার ও যাত্রীদের ভেতরে বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেন যাত্রীরা। এ ছাড়া অন্য রুটে চলাচলরত ট্রেন যাত্রীদের ভেতরেও ‘ট্রেন লাইনচ্যুত ও আগুন লাগা’র ঘটনায় শঙ্কাবোধ জন্মেছে যাত্রীদের।
সন্ধ্যা ৭টার সময় কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ছিল শাওনের। আগামীকাল সকালে তাঁর বোনকে ‘বরপক্ষ’ দেখতে আসবে বাড়িতে। অথচ তাঁকে টিকেট ফেরত নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। শাওন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ট্রেন ছাড়ার সময়ে এসে যদি শুনি ট্রেন যাবে না তাহলে কেমন লাগে? বাসে গিয়ে এখন টিকেট পাব? যদিও পাই তাহলে পাব পেছনের সিটে। রেল ব্যবস্থাপনা কি এতই খারাপ যে, একটি দুর্ঘটনা ঘটলে পুরো রুটই সারা দিন বন্ধ থাকবে?’
মাসুম বিল্লাহ টাকা ফেরত নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তবে তাঁর সামনে অনেক মানুষ। কখন টাকা ফেরত পাবেন তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ‘যত বড় লাইন কত সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে তা আমি জানি না। একে একে সবাইকে ফেরত দেওয়া হবে টাকা। আবার একটি মাত্র কাউন্টার থেকে টাকা ফেরত দিচ্ছে। আরো দুইটা কাউন্টার বাড়ালে কী এমন ক্ষতি হতো?’
কমলাপুর থেকে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে চেপে জামালপুরের উদ্দেশে স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছেন সাদেকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সত্যিই আজ ট্রেনে উঠতে ভয় করছে। কিন্তু অনেক আগে থেকে টিকেট কেটে রাখা বলে আর এখন আর কিছু করার নেই। টানা দুইটা বড় ট্রেন দুর্ঘটনা। ভাবলেই তো ট্রেনে যেতে ইচ্ছে করছে না। তবু্ও উঠলাম। আল্লাহর নামে পথ চলা শুরু হোক।’
ট্রেন কখন আসবে এটা জানতে শত শত মানুষ স্টেশনের অনুসন্ধান কক্ষে ভিড় করছে। অনুসন্ধান কক্ষের ইনচার্জ মো. সারওয়ার হোসেন সবাইকে টাকা ফেরত নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন। তবে যদি কেউ অপেক্ষা করতে চান তাকে দেরি করতে বলছেন। জানতে চাইলে মো. সাওয়ার হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে এমন সব ট্রেনই এখনো বন্ধ আছে। কখন চালু হবে সেই তথ্যই আমরা এখনো জানতে পারিনি। কারণ এখনো কাজ করছেন কর্মীরা।’
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘যাত্রীদের কত সময় বসিয়ে রাখব এভাবে? সেজন্য টিকেটের টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপাতত চিত্রা এক্সপ্রেস ও দ্রুত যান এক্সপ্রেসের টিকেটের টাকা ফেরত দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সব টিকেটের টাকা ফেরত দিতে হবে হয়তো। নাও হতে পারে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। যদি কেউ ফেরত না নেন, সেক্ষেত্রে ট্রেন এসে পৌঁছালে তিনি ঢাকা ছাড়তে পারবেন।’