ডিসি সুলতানাসহ চারজন প্রত্যাহার, নতুন ডিসি রেজাউল করিম

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করেছে সরকার। একই সঙ্গে সেখানে নতুন ডিসি হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে গতকাল রোববার কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (আরডিসি-রাজস্ব) নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।
অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাড়িতে মধ্যরাতে হানা এবং তাঁকে তুলে নিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনায় এই চার কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হলো। এই চারজনের মধ্যে নাজিম উদ্দিন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনে সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রাজস্ব শাখা, এলএ শাখা, ব্যবসা ও বাণিজ্য শাখা এবং আরএম শাখা) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের ছাত্র নাজিম বিসিএস ৩৩ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। সাংবাদিক আরিফকে বিবস্ত্র করে ও চোখ বেঁধে নির্যাতন করেন তিনি এবং এনকাউন্টারের মেরে ফেলার ভয় দেখান। বাগেরহাটের মোংলা, মাগুরার মহম্মদপুর ও কক্সবাজারে দায়িত্ব পালনের সময়ও তাঁর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে নির্যাতন ও হয়রানির একাধিক অভিযোগ উঠেছিল।

অন্যদিকে রিন্টু বিকাশ চাকমা কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (স্থানীয় সরকার শাখা, রেকর্ডরুম শাখা ও আইসিটি শাখা) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আইন লঙ্ঘন করে মধ্যরাতে বাসায় গিয়ে সাংবাদিক আরিফকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজার আদেশ দেন তিনি। রিন্টু বিকাশ চাকমা বিসিএস ৩৫ ব্যাচের কর্মকর্তা।
এস এম রাহাতুল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত, ট্রেজারি ও স্ট্যাম্প এবং প্রবাসীকল্যাণ) হিসেবে কাজ করতেন। মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফের বাসায় অভিযানের সময় তিনিও ছিলেন বলে জানা গেছে।
এর আগে গতকাল রোববার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করা হবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফ এ বিষয়ে সংবাদ করার পর থেকেই তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এ ছাড়া সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে ডিসি সুলতানা পারভীনের অনিয়ম নিয়েও প্রতিবেদন তৈরি করেন আরিফুল। এ সময় একাধিকবার তাঁকে ডিসি অফিসে ডেকে নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনার জেরে গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফের বাসায় হানা দিয়ে তাঁকে তুলে ডিসি অফিসে এনে নির্যাতন করা হয়। এরপর আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে ওই রাতেই তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। এ নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলে পরের দিন রোববার তাঁকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।