ড্রাম থেকে উদ্ধারকৃত লাশটি নার্সের, হত্যায় জড়িত কনস্টেবল প্রেমিক
রাজশাহী সিটিহাট এলাকার পাশের ডোবায় পড়ে থাকা ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধারকৃত তরুণীর লাশের পরিচয় মিলেছে। মৃতদেহের ফিঙ্গার প্রিন্ট থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে।
ওই তরুণীর নাম ননিকা রাণী বর্মণ (২২)। তিনি রাজশাহী নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষ করার পর নগরীর একটি ক্লিনিকে তিনি নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ননিকা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মিলনপুর গড়েয়া গ্রামের নিপেন চন্দ্র বর্মণের মেয়ে।
পিবিআইর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এই তরুণী হত্যায় জড়িত রয়েছেন নিমাই চন্দ্র সরকার নামের এক পুলিশ কনস্টেবল। পিবিআই তাঁকেসহ তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ কনস্টেবল নিমাই ছাড়া গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার আদারীপাড়া মহল্লার কবির আহম্মেদ (৩০), রাজপাড়া থানার বিলসিমলা এলাকার আব্দুর রহমান (২৫) এবং শ্রীরামপুর টি-বাঁধ এলাকার সুমন আলী (৩৪)। আব্দুর রহমান মাইক্রোবাসের চালক। তিনি আগে হিন্দু ছিলেন। তখন তার নাম ছিল সঞ্জয় রায়। তাঁর মাইক্রোবাসে করেই লাশ ফেলে আসা হয়েছিল।
আজ সোমবার দুপুরে পিবিআই রাজশাহী কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আযাদ সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, নার্স ননিকা রাণী বর্মণ অবিবাহিত ছিলেন। রাজশাহী রেলওয়ে পুলিশে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারের (৪৩) সঙ্গে তাঁর সাত-আট বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। নিমাই বিবাহিত। তাঁর স্ত্রীর নাম বুলবুলি রাণী দাস। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয় বলে এক সন্তানকে নিয়ে তিনি আলাদা থাকেন। নিমাই পাবনার আতাইকুলা উপজেলার চরাডাঙ্গা গ্রামের মৃত হেমন্ত সরকারের ছেলে। রাজশাহী পিবিআইয়ের একটি দল রোববার ভোররাতে নাটোরের লালপুরে বোনের বাড়ি থেকে নিমাইকে গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৬ এপ্রিল ননিকাকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় বাসা ভাড়া নেন নিমাই। তারা লিভ টুগেদার করছিলেন। তবে ননিকা বিয়ের জন্য নিমাইকে চাপ দিচ্ছিলেন। সে কারণেই তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যার সময় নিমাইয়ের বন্ধু কবির আহম্মেদ ও সুমন আলী ননিকার হাত-পা চেপে ধরেছিলেন। আর নিমাই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করেন। পরে বাজার থেকে চাল রাখার একটি ড্রাম কিনে আনেন। সেই ড্রামে লাশ ঢুকিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে সেটি সিটিহাটের পাশের ডোবায় ফেলে আসে তারা।
ননিকা রাণী রায়ের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ননিকা সদ্য নার্সিং পাস করেছেন। এরপর রাজশাহী নগরীর একটি ক্লিনিকে চাকরি নিয়েছিলেন। নগরীর পাঠানপাড়া এলাকার একটি ছাত্রীনিবাসে থাকতেন তিনি। সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। মৌখিক পরীক্ষার জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন। পুলিশ কনস্টেবল নিমাইয়ের সঙ্গে গিয়ে আলাদা বাসায় ওঠার বিষয়টি পরিবার জানত না। হত্যাকাণ্ডের পর তারা এটি জেনেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই রাজশাহীতে কর্মরত ছিলেন কনস্টেবল নিমাই। সাত বছর ধরে আছেন রাজশাহী রেল পুলিশে। এর আগে তিনি রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) ছিলেন। সে সময় ডিবি কার্যালয় এলাকার এক কলেজছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাঁর নগ্ন ভিডিও ধারণ করেছিলেন। ভিডিওটি কম্পিউটারের দোকান থেকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে নানা কৌশলে চাকরি ফিরে পেয়ে রেল পুলিশে যোগ দেন। এবার আগের চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা ঘটালেন এই কনস্টেবল।
এর আগে গত শুক্রবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর সিটিহাট এলাকা থেকে ননিকার লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি ছিল একটি ড্রামের ভেতর। সেদিন তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। এ নিয়ে নগরীর শাহ মখদুম থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করা হয়। থানা পুলিশ বিষয়টির তদন্ত শুরু করে। পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করছিল পিবিআই। শেষে পিবিআই এই তরুণীর পরিচয় উদঘাটনের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদেরও গ্রেপ্তার করে।
পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ জানান, আজ দুপুরে শাহ মখদুম থানা থেকে হত্যা মামলাটি তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা পিবিআইয়ের কাছে প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সমস্ত বিষয় স্বীকার করেছে। তিন দিনেই সূত্রবিহীন এ হত্যাকাণ্ডের সমস্ত বিষয় উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। দ্রুতই আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে জানান তিনি।