দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন ধর্মঘট তৃতীয় দিনে, যাত্রীদুর্ভোগ চরমে

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে খুলনা, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, ময়মনসিংহ, গাজীপুর কিশোরগঞ্জ, ঝালকাঠিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তৃতীয় দিনের মতো ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করছেন পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা।
পরিবহন ধর্মঘটের ফলে যাত্রীদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ইঞ্জিনচালিত যানে, হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষ।
গত রোববার থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওই দিন থেকে যশোর, নড়াইলসহ দেশের কয়েকটি জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রাখেন মালিক-শ্রমিকরা। গতকাল মঙ্গলবারও পরিবহন ধর্মঘট করেন তাঁরা। এর সঙ্গে ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলার শ্রমিকরা যুক্ত হয়েছেন।
ঢাকার বাইরে এনটিভির নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, খুলনা : নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে শ্রমিকদের অঘোষিত কর্মবিরতির ফলে খুলনা-ঢাকাসহ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর সঙ্গে আজ বুধবার সকাল থেকে এ কর্মবিরতিতে যোগ হয়েছে নয় দফা দাবিতে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিকদের ধর্মঘট। তৃতীয় দিনের মতো চলা বাস ধর্মঘটে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে, ট্রেনে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
আজ সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আন্তনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। আসন ছাড়াই টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে যাত্রীদের কাছে। এমনকি পরিচালকের কক্ষেও যাত্রী উঠতে দেখে গেছে। খুলনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্যও অনেকে ট্রেনের টিকেট নিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠকে আইন বাস্তবায়নে কিছুটা শিথিলতা আসবে এমন আশ্বাসে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল করবে বলে জানান পরিবহন শ্রমিক নেতারা। তবে শ্রমিকরা নেতাদের কথা শুনছে না বলে দাবি করছেন শ্রমিক নেতারা।
খুলনা মোটর বাস শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি কাজী নুরুল ইসলাম বেবী আজ বুধবার জানান, গতকাল প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে আজ থেকে বাস চলানোর আশ্বাস দিলে শ্রমিক নেতাদের কোনো কথা শুনতে রাজি হচ্ছেন না সাধারণ শ্রমিকরা। তাঁরা আইন সংশোধন না করা পর্যন্ত বাস না চালানোর সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।
এদিকে শ্রমিকদের কর্মবিরতির সুযোগে ইঞ্জিনচালিত স্থানীয় যান, ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, মিনি পিকআপ, মাইক্রোবাসসহ ছোট গাড়ির চালকরা কয়েকগুণ ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে এসব যানে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছেন।
সাবিনা ইয়াসমিন শ্যামলী, কুষ্টিয়া : নতুন সড়ক পরিবহন আইনকে শ্রমিকদের স্বার্থপরিপন্থী উল্লেখ করে এর ধারা ও উপধারা সংশোধন করার দাবিতে কুষ্টিয়ায় পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলছে। ফলে কুষ্টিয়ার সব সড়কে বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে।
চালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার থেকে নতুন সড়ক আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকেই ভয়ে অনেক চালক গাড়ি চালাচ্ছেন না।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়ার প্রশাসন, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের আশ্বাসে কুষ্টিয়ায় পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও আজ বুধবার সকালে কর্মবিরতি পালন করে চলেছেন পরিবহন শ্রমিক ও চালকরা।
কুষ্টিয়া পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন জানান, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসনের সঙ্গে সভায় এ সিদ্ধান্তের পরও পরিবহন শ্রমিকরা ভয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন না।

শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ : নয় দফা দাবিতে আজ বুধবার সকাল থেকে সিরাজগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি বাস ও সিএনজি চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
বুধবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা সিরাজগঞ্জ বাস ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। কোনো ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের।
বাসের অপেক্ষায় বাস টার্মিনাল ও কাউন্টারগুলোতে ভিড় করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। জেলা শহর থেকে দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
বাসচালক বাবু শেখ বলেন, ‘না খেয়ে মরতে রাজি আছি, কিন্তু বাস চালাতে রাজি নই। সড়ক দুর্ঘটনা ইচ্ছে করে হয় না, হঠাৎ করেই হয়ে থাকে। কিন্তু সরকার যে আইন করেছে, তাতে শ্রমিকরা বিপদে পড়েছে। জরিমানা ও জেলের বিধান রাখা হয়েছে। জরিমানার টাকা শ্রমিকরা কোথায় পাবে। এটা মানা সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছি।’
বাসযাত্রী আবুল হোসেন বলেন, ‘শাহজাদপুর কলেজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছি। বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস বন্ধ। এখন তো দেখি যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাস বন্ধের ঘোষণা আগে থেকে থাকলে এ সমস্যায় পড়তে হতো না।’
সিরাজগঞ্জ মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল শেখ দুলু বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধনসহ নয় দফা দাবিতে শ্রমিকরা নিজেই থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। তাঁরা মালিকের কাছে গাড়ির চাবি হস্তান্তর করছেন গাড়ি চালাবেন না বলে। শ্রমিকরা না চাইলে তো জোর করে গাড়ি চালানো যাবে না।’
আইয়ুব আলী, ময়মনসিংহ : নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে ময়মনসিংহে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে বাসচালক ও শ্রমিকদের ধর্মঘট। পাশাপাশি আজ বুধবার থেকে ট্রাক-লরিসহ বিভিন্ন যানবাহন চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা।
আজ বুধবার সকালে ময়মনসিংহ নগরের মাসকান্দায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনের রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছেন শ্রমিকরা।
পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে বাধা সৃষ্টি করার পাশাপাশি রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামা চালকদের মুখে কালো রং মাখিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। শহরের পাটগুদাম ব্রিজ, মাসকান্দা, চুরখাইসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সড়কে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছেন শ্রমিকরা।
বাস টার্মিনালে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আন্তজেলাসহ দূরপাল্লার বাসগুলো। একই অবস্থা পাটগুদাম ব্রিজ মোড়েও। পরিবহন ধর্মঘটে ময়মনসিংহে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে আসছে।
আবু হোসাইন সুমন, মোংলা : যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের কারণে মোংলা বন্দরে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বুধবার সকাল থেকে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় মোংলা বন্দর জেটি থেকে কোনো আমদানি পণ্য বের হতে পারছে না। অন্যদিকে রপ্তানিযোগ্য পণ্যও বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
পরিবহন ধর্মঘটে মোংলা বন্দরের শিল্প এলাকার ২০টি এলপিজি ফ্যাক্টরি, পাঁচটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসহ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত অঞ্চলের (ইপিজেড) পণ্য পরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃক্ষের সহকারী ট্রাফিক ব্যবস্থাপক মো. সোহাগ বলেন, ধর্মঘটের কারণে মোংলা বন্দর জেটি থেকে সড়কপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে বন্দরে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলেও তিনি জানান।
মোংলা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মো. মাহাবুবুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ট্রাক-ট্রলি চলাচল বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে। তবে ইপিজেডের সব কারখানায় কাজ চলছে।
এ ছাড়া বুধবার তৃতীয় দিনের মতো মোংলা-খুলনা, মোংলা-রূপসা, মোংলা-বাগেরহাটসহ সব রুটে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি এখন চরমে পৌঁছেছে।
ট্রাকচালক নজরুল শেখ ও হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘নতুন আইনে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার যে বিধান করা হয়েছে, তা আমরা মানি না। এ আইন মেনে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। তাই আমরা গাড়ি বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছি এবং আইন শিথিলের দাবি জানাচ্ছি।’
মো. আলমগীর হোসেন, ভালুকা : গণপরিবহনের শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার জন্য যাত্রীদের বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় কিছু গাড়ি চলাচল করলেও ভাড়া নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ। আজ বুধবার দুপুরে মাজার জিয়ারতের ব্যানার লাগানো একটি বাস ভালুকা বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বাসটিতে সাধারণ যাত্রীদের নেওয়া হলেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়।
স্থানীয় কয়েকজন বাসচালক জানান, ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে শ্রমিকরা গাড়ি ভাঙচুর করছেন। তাই তাঁরাও গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছেন না। সড়কে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায়নি।
শহীদুল হুদা অলক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জে দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন শ্রমিকরা। আজ বুধবার সকাল থেকে আন্তজেলা ও উপজেলা রুটে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এদিকে ট্রাক চলাচল করছে খুবই কম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি লুৎফর রহমান ফিরোজ জানান, দ্বিতীয় দিনের মতো আজ বুধবার সকাল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাজশাহী রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আন্তউপজেলা রুটেও চলছে না।
এদিকে আন্তজেলা ও অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীসাধারণ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। অন্যদিকে আজ বুধবার সকালে পরিবহন মালিক গ্রুপের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ট্রাক ও ট্যাঙ্কলরি চলাচল দাপ্তরিকভাবে বন্ধ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন চাঁপইনবাবগঞ্জ ট্রাক, ট্যাঙ্কলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইদুর রহমান।

আতিকুর রহমান সোহাগ, বগুড়া : নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে বগুড়ায় বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকদের আকস্মিক এ ধর্মঘটে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ।
আজ বুধবার সকাল থেকেই বগুড়ায় বাস চলাচল হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকে বগুড়া টার্মিনাল থেকে আন্তজেলা ও জেলা পর্যায়ের কোনো বাস, মিনিবাস ছেড়ে যায়নি। এ ছাড়া ঢাকাগামী কোনো কোচ বগুড়া ছেড়ে যায়নি। পাশাপাশি বিভিন্ন দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলো খোলা রাখা হলেও টিকেট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। তাঁরা বলছেন, সকালে কোচ ছেড়ে গেলে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে ট্রাক শ্রমিকরা সেগুলো আটকে দেওয়ার পর আর ছাড়া হচ্ছে না।
তবে বিআরটিসির বাস ডিপো থেকে সব রোডে বাস চলাচল করছে।
অন্যদিকে নয় দফা দাবিতে আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকার কারণে চরমভাবে পণ্য পরিবহনও বন্ধ রয়েছে। এতে করে কাঁচা সবজি ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যাওয়া বন্ধ রয়েছে।
বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি কামরুল মোর্শেদ আপেল জানান, শ্রমিক ইউনিয়ন কোনো ধর্মঘটের ডাক দেয়নি। চালকরা নিজেই বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছে। তবে দূরপাল্লার কিছু কিছু বাস চলাচল করছে।
মারুফ আহমেদ, কিশোরগঞ্জ : নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাতিলের দাবিতে কিশোরগঞ্জ থেকে সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন চালক ও শ্রমিকরা। আজ বুধবার সকাল থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়। এর ফলে জেলা শহরের গাইটাল ও বত্রিশ আন্তজেলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকাগামী বাসও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় কিশোরগঞ্জের সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ সব জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বাস ধর্মঘটের পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের ট্রাক ধর্মঘটও শুরু হয়েছে।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বলছে, এ ধরনের কঠোর আইনের অধীনে বাস চালানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এ আইন বাতিল না করা হলে তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
এর আগে গত ৭ নভেম্বর একই দাবিতে কিশোরগঞ্জে একদিনের বাস ধর্মঘট পালন করেন পরিবহন চালক ও শ্রমিকরা।
মো. আক্তারুজ্জামান রঞ্জন, আশুগঞ্জ : নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ নয় দফা দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন জেলা ট্রাকচালক ও শ্রমিক ইউনিয়ন। এর ফলে আশুগঞ্জ সার কারখানা থেকে দেশের সাতটি জেলায় সার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তা ছাড়া দেশের অন্যতম বৃহত্তর চালের মোকাম আশুগঞ্জ থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চাল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
আশুগঞ্জ ট্রাক, ট্যাঙ্কলরি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা জানান, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার সকাল থেকে এ ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। শ্রমিকদের এ ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছে ট্রাক মালিকরাও। আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সব ধরনের পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, পরিবহন শ্রমিকদের এ ধর্মঘট অব্যাহত বা দীর্ঘায়িত হলে ইরি-বোরো মৌসুমে সার সংকটসহ বন্দর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ট্রাকচালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইদন মিয়া মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল হক সরকারের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তাঁরা বলেন, নতুন সড়ক আইন প্রয়োগের ফলে শ্রমিকদের রাস্তায় গাড়ি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এ আইনে ওভারলোডিংসহ বিভিন্ন ধারায় যে পরিমাণ জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে, তা কোনো শ্রমিকের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। শ্রমিকেরা ওভারলোডিং করতে চায় না, তারা ইচ্ছা করে কোনো দুর্ঘটনা ঘটায় না।
জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, শ্রমিক ছাড়া মালিক অচল। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসায়ী তারা শ্রমিকদের ধর্মঘটকে সর্মথন জানিয়েছেন।
জেলা সার সমিতির সভাপতি হাজি জালাল উদ্দিন জানান, ট্রাক শ্রমিকদের ধর্মঘটের ফলে বুধবার সকাল থেকে কারখানা হতে সার উত্তোলন ও সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে সারের মৌসুম। এ ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে দেশে সারের সংকট দেখা দিতে পারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চাতালকল মালিক সমিতির সভাপতি বাবুল আহমেদ বলেন, ট্রাক শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে আশুগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চাল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে আশুগঞ্জের চাল ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।
নাসির আহমেদ, গাজীপুর : সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে গাজীপুরে বুধবার সড়ক-মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যান চলছে না। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন ট্রাক ও লোকাল বাস সার্ভিসও। কিছু বাসচালক ধর্মঘটেও গাড়ি নিয়ে বের হওয়ায় কিছু পরিবহন শ্রমিক কয়েকটি বাসের গ্লাস ভাঙচুর এবং চালকদের মুখে পোড়া মবিল ও কালি মেখে দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সড়কে যানবাহন না থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসেম জানান, বুধবার ভোর ৬টা থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দূরপাল্লারসহ বাস, ট্রাক ও লরি চলাচল কমতে থাকে। সকাল ৮টার পর থেকে ওই মহাসড়কে সকল পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। তবে গুটিকয়েক লোকাল বাস চলতে দেখা গেছে।
সালনা হাইওয়ে থানার ওসি মো. মজিবুর রহমানও একই কথা বলেন। ঢাকা-ঢাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের অংশে কোনো দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, লরি চলছে না। লোকাল বাসও খুব কম। সড়কে বাস না থাকায় নারী-শিশু ও বৃদ্ধসহ যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গাড়ির জন্য বিভিন্ন স্থানে লোকজনকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। গাড়ি না পেয়ে অনেকে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছেন।
টাঙ্গাইলের গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মাঝেমধ্যে দূরপাল্লার গাড়ি চলতে দেখা গেলেও তার পরিমাণ কম।
গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমেদ সরকার জানান, সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে গাজীপুর হয়ে উত্তরাঞ্চলের দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। সকাল থেকেই গাজীপুর হয়ে ঢাকার সঙ্গে চলাচলকারী শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রংপুর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন রুটের দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক আসা যাওয়া করছে না। তবে সড়কে কিছু সংখ্যক রিকশা-অটোরিকশাসহ ছোট যান চলাচল করছে।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে টঙ্গী এলাকার সড়ক থেকে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার থোয়াই অং প্রু মারমা।
কে এম সবুজ, ঝালকাঠি : সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারের দাবিতে ঝালকাঠিতে দ্বিতীয় দিনেও বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঝালকাঠি থেকে ঢাকাসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব রুটে আকস্মিক বাস বন্ধ থাকায় এসব রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়েছেন। আজ বুধবার সকালে ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে এসে বাস না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অসংখ্য মানুষ। আটোরিকশা এবং ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেকেই। অসংখ্য মানুষকে ঝালকাঠি থেকে বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ভেঙে ভেঙে যেতে হচ্ছে।
এ আইন সংস্কার করার দাবি জানিয়ে বাস ধর্মঘট শুরু করে ঝালকাঠি আন্তজেলা শ্রমিক ইউনিয়ন। নতুন সড়ক পরিবহন আইনের কারণে পরিবহন চালক ও শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।