নাসিম রিয়েল এস্টেট ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে : র্যাব
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) দাবি করেছে, নাসিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানি প্লট ও ফ্ল্যাটের নামে গ্রাহকেদের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আবাসন শিল্পের মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সদস্য এই কোম্পানিটি গ্রাহকদের কাছ থেকে প্লট বা ফ্ল্যাট দেওয়ার নামে অগ্রিম অর্থ নিত কিন্তু তাদের তা বুঝিয়ে দিত না। প্রায় দুই দশক ধরে কোম্পানিটি গ্রাহকদের সঙ্গে এই প্রতারণা করে আসছে।
প্রতারণার অভিযোগে গতকাল বুধবার রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকা থেকে কোম্পানি স্বত্বাধিকারী ইমাম হোসেন নাসিম (৬৬) ও তাঁর তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার সালমাকেও (৩২) গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় তিনি জানান, নাসিমের প্রতারণার শিকার ১২-১৩ জন ভুক্তভোগী তাঁর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অস্ত্র, মাদক ও প্রতারণার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আরো চারটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে র্যাব।
তবে র্যাবের এসব অভিযোগের ব্যাপারে নাসিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইমাম হোসেন নাসিমের উত্থানের বিষয়ে র্যাব-৪-এর কর্মকর্তা মোজ্জাম্মেল হক বলেন, তিনি ১৯৭৮ সাল হতে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত একটি কোম্পানির ঠিকাদারির কাজ করতেন। ২০০২ সালে তিনি নাসিম রিয়েল এস্টেট কোম্পানি গঠন করেন। এই কোম্পানির অধীনে নাসিম সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় অন্যের জমি ও খাসজমি দখল করে আবাসিক শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। প্রায় পাঁচ হাজার গ্রাহকের সঙ্গে বায়না করে প্রত্যেকের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা এবং নকল নিবন্ধনের নামে আড়াইশ জনের প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকাসহ মোট ২৮০ কোটি টাকা প্রতারণা করেন।
র্যাব জানায়, নাসিমের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে অসংখ্য সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের সময় একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, তিনটি গুলি, নগদ এক লাখ ৩৫ হাজার জাল টাকা, এক হাজার ৪০০ ইয়াবা, দুই বোতল বিদেশি মদ, চারটি ওয়াকিটকি, ছয়টি পাসপোর্ট, ৩৭টি ব্যাংক চেক বই ও ৩২টি মোবাইল ফোনের সিম উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর মোট ১৬টি কোম্পানির মধ্যে একটি কোম্পানিই ৩০০ কোটি টাকা প্রতারণা করেছে বলে জানা গেছে। বাকিগুলোরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
নাসিমের কোম্পানিরগুলোর মধ্যে রয়েছে- নাসিম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, নাসিম ডেভেলপার লিমিটেড, নাসিম অ্যাগ্রো ফুড লিমিটেড, নাসিম বাজার, এস বি ফাউন্ডেশন, ডা. বেলায়েত হোসেন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, নাসিম পার্সেল ও কুরিয়ার সার্ভিস, সাপ্তাহিক ইমারত অর্থ, নাসিম শিপ বিল্ডার্স, নাসিম ইঞ্জিনিয়ারিং ও কনসালট্যান্সি, নাসিম ট্রেডিং লিমিটেড, সাহানা আই হাসপাতাল, বাংলা নিউজ ১৬, নাসিম ড্রিংকিং ওয়াটার, নাসিম সুগার ও নাসিম বেভারেজ।
র্যাব-৪-এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ইমাম হোসেন নাসিম বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে ৩২টি সিমকার্ড ব্যবহার করে প্রতারণা করতেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে তিনি অনেক সময় নিজের বাড়ির ভিতরের গোপন সুড়ঙ্গে আত্মগোপন করে থাকতেন। অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে তিনি জমি দখল ও মানুষকে ভয় দেখাতেন। ইমাম হোসেন নাসিম সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে স্ত্রীর সহযোগিতায় ইয়াবা ও বিদেশি মদ সংগ্রহ করে ঢাকায় ডিলার ও খুচরা পর্যায়ে সরবরাহ করতেন। তাঁরা জাল নোটের ব্যবসাও করতেন।
নাসিম ১৯৭৪ সালে স্নাতক পাস করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনটি বিয়ে করেন এবং তাঁর তিনটি সন্তান রয়েছে বলে জানায় র্যাব। রিয়েল এস্টেট কোম্পানির বাইরে অন্য কোম্পানিগুলো ২০০৫ সালের পর গঠন করা হয়।