নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন ওসি মোয়াজ্জেম

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি ন্যায়বিচার চেয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস-শামস জগলুল হোসেনের আদালতে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে এ কথা বলেন।
ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ওসি মোয়াজ্জেমের যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন নির্ধারিত ছিল। ওসি মোয়াজ্জেমকে বিচারক দোষী কিংবা নির্দোষ প্রশ্ন করলে ওসি মোয়াজ্জেম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। এর পরে বিচারক আগামী ২০ নভেম্বর যুক্তিতর্কের শুনানির জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেন।
ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘মামলার যুক্তিতর্ক শুনানির পরেই এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।’
গত ২ জুলাই হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। এর আগে ১৭ জুন তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
এর আগের দিন ১৬ জুন শাহবাগ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০ জুন সাইবার ট্রাইব্যুনালে ওসি মোয়াজ্জেমের পক্ষে কারাগারে ডিভিশন পাওয়ার বিষয়ে আবেদন করা হলে বিচারক গত ২৪ জুন ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রথম শ্রেণির বন্দির (ডিভিশন) সব সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
সোনাগাজী থানায় মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ‘অসম্মানজনক’ কথা বলায় এবং তাঁর জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল সাইবার ট্রাইব্যুনালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। সেইসঙ্গে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ৩০ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ২৭ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। একই দিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে একই ট্রাইব্যুনালের বিচারক সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে ১৭ জুন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন।
পিবিআইর প্রতিবেদনে বাদীসহ ১৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে সোনাগাজী থানার চারজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
প্রতিবেদনে পিবিআই বলেছে, ‘নুসরাত জাহান রাফির বয়স কম এবং তিনি একজন মাদ্রাসাছাত্রী। তাকে কয়েকজন পুরুষের সামনে শ্লীলতাহানির বক্তব্য শোনা এবং তা ভিডিওধারণ করা ন্যায়সংগত নয়। নারী ও শিশুরা যেহেতু শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় থানায় আসেন, সেহেতু নারী ও শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ সদস্যদের অনেক বেশি সহনশীল হওয়া প্রয়োজন।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও নিয়মবহির্ভূতভাবে ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্যের ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় অপরাধ করেছেন।’
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী নুসরাতের মা। পরে সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে যাওয়ার পর সোনাগাজী থানার ওসির কক্ষে ফের হয়রানির শিকার হতে হয় নুসরাতকে। নিয়ম না মেনে জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তাঁর আইনজীবী ছিলেন না।
গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আগমুহূর্তে মিথ্যা কথা বলে নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় দুর্বৃত্তরা। মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ওই দিন নুসরাতকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃত্যু হয়।
এদিকে গত ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলায় ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ আসামির সবার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।