প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে জীবন দিলেন অসিত
প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে জীবন দিলেন প্রেমিক অসিত বৈরাগী (২২)। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলায়।
জানা গেছে, কাশিয়ানি উপজেলায় প্রেমিক-প্রেমিকা ঘর ছাড়ার পর প্রেমিকার বাবা সালিশ বসিয়ে তাদের ফিরিয়ে আনেন। সালিশে প্রেমিকের পরিবারকে তিন লাখ টাকা জরিমানা এবং গ্রাম ছাড়া করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রেমিকের পরিবার তিন লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। এ খবর জানতে পেরে প্রেমিকা প্রেমিককে নিয়ে ফের বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় প্রেমিকার বাবা থানায় মামলা করেন। এ মামলায় প্রেমিকের মা লতিকা বৈরাগী ও খালু পবিত্র বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জেলহাজতে পাঠায়। প্রেমিক-প্রেমিকা এ খবর জানতে পেরে একসঙ্গে বিষপান করে প্রেমিকার বাড়িতে হাজির হয়। পরে অসিত বৈরাগী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দিবাগত রাত ১টায় মৃত্যু বরণ করেন। আর প্রেমিকা গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাশিয়ানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর কবির অসিত বৈরাগীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মেয়ের বাবার দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে। আমি সালিশের কথা শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অসিতের মৃত্যুর ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে সেটিও তদন্ত করে দেখা হবে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, অসিতের সঙ্গে প্রভাবশালী প্রতিবেশীর এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ভালোবাসার টানে গত ২৫ মে অসিত প্রেমিকাকে নিয়ে ঘর ছাড়েন। ২৬ মে গ্রামের লোকজনদের নিয়ে সালিশ হয়। অসিতের পরিবার সালিশের পর মেয়েকে ফেরত দেয়। ওই রাতেই মেয়েকে তারা মামাবাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। ২৭ মে ফের প্রেমিকা প্রেমিক অসিতকে নিয়ে মামাবাড়ি থেকেই পালায়। এ ঘটনায় প্রেমিকার বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে অসিতের মা লতিকা ও খালু পবিত্র মণ্ডলকে ধরে এনে নিজ বাড়িতে আটক রাখেন। ২৯ মে কাশিয়ানী থানায় প্রেমিকার বাবা বাদী হয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণ ও পাচারের অভিযোগে মামলা এবং অসিতের মা ও খালুকে পুলিশে সোপর্দ করেন। ৩০ মে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়।
এ খবর জানতে পেরে ৩০ মে দুপুরে প্রেমিকযুগল প্রেমিকার বাড়িতে এসে বিষপান করে। পরে তাদের গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অসিতের অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই তাকে খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দিবাগত রাতে তিনি মারা যান।
অসিতের মা লতিকা বৈরাগী বলেন, ভালোবাসার টানে ঘর ছাড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের ওপর প্রভাবশালী ওই পরিবারটি অমানবিক অত্যাচার করেছে। তারা আমাদের বাড়িতে আটক রেখেছে। পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের জেলে পাঠিয়েছে। এটি সইতে না পেরে ছেলে-মেয়ে এক সঙ্গে বিষপান করেছে। আমার ছেলে মারা গেছে। আমি এ ঘটনার ন্যায়বিচার চাই।
অভিযুক্ত প্রেমিকার প্রভাশালী বাবা সালিশ বসিয়ে তিন লাখ টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে ওই ছেলের কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। প্রথম দফায় তারা আমার মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার পরও ফিরিয়ে দিয়েছিল। পরে আবার তারা মেয়ের মামাবাড়ি থেকে তাকে অপহরণের পর পাচার করতে চেয়েছিল। এ ঘটনায় আমি মামলা দায়ের করেছি। তিনি অসিতের পরিবারকে গ্রামছাড়া বা কোনো চাপ প্রয়োগ করেননি বলেও জানান।