বিএসএমএমইউতে নকল মাস্ক : ঢাবি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নকল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে ‘অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কর্তৃপক্ষ। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহানকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আজ শুক্রবার শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন।
আবুল হাসান বলেন, ‘নকল মাস্ক সরবরাহের ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারীর বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের করেছেন বিএসএমএমইউয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। মামলার আসামি করা হয়েছে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শারমিন জাহানকে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘নকল মাস্ক সরবরাহের ঘটনায় আমরা অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলাম। তারা যে কারণ দেখিয়ে উত্তর দেখিয়েছিল তা সন্তোষজনক নয়। সেজন্য আমরা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।’
এ ব্যাপারে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শারমিন জাহান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি মাস্ক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নই, আমার কাজ সরবরাহ করা। আমি চারটি ধাপে মাস্ক সরবরাহ করেছিলাম। কিন্তু তৃতীয় দফার মাস্ক নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছে। চতুর্থ দফার মাস্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠলো না। আমার কথা হচ্ছে, আমি গত ১২ জুলাই হাসপাতালের একজন হিসাব কর্মকর্তা ও সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলামের কাছে মাস্কগুলো হস্তান্তর করি। তখন কিন্তু তারা প্রশ্ন তুলেনি, তুলেছে অনেক পরে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, আমি তাদের আগোচরে মাস্ক সরবরাহ করেছি। কিন্তু তা সঠিক নয়। তারা আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ১৮ জুলাই। আমি কারণ দর্শানোর নোটিশের পক্ষে জবাব দিয়েছিলাম ২০ জুলাই। তারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করতেই পারে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের মাধ্যমেই মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।’
শারমিন জাহানকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ‘গত ২৭ জুন বিএসএমএমইউয়ের কোভিড ওয়ার্ডে ডিউটিরত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাস্ক সরবরাহের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। উক্ত মাস্ক সরবরাহের জন্য আপনাকে স্পষ্ট করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসকগণদের জীবন রক্ষাকারী নির্ধারিত মাস্ক সরবরাহ না করে নিম্নমানের মাস্ক কর্তৃপক্ষের অগোচরে সরবরাহ করেছেন যা চিকিৎসক ও নার্সগণের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে।’
‘আপনার এই ধরনের অনৈতিক ও অসংগতিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের জন্য কর্তৃপক্ষ আপনার বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না, তা এই পত্র জারির দুই কর্ম দিবসের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারী (হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ) বরাবর উত্তর দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হল’, যোগ করা হয় কারণ দর্শানোর নোটিশে।
শোকজের জবাবে শারমিন জাহান লিখিতভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন, “আপনার প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ মোতাবেক শর্তাদি পুরণ করে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনার চারটি ধাপে মোট তিন হাজার ৬০ পিস এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করে। এর মধ্যে তৃতীয় সরবরাহকৃত এক হাজার পিস মাস্ক নিয়ে সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে। যদিও ‘ডাইজেন ইন্টারন্যাশনাল’ কর্তৃক কোনোরূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এক হাজার পিস মাস্কের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তদুপুরি গ্রাহক সন্তুষ্টির কথা বিবেচনা করে ৯৫৯টি মাস্ক ফেরত নিয়ে আসি। নীতিগত কারণেই তৃতীয় ধাপ সরবরাহের বিপরীতে কোনো অর্থ গ্রহণ করা হয়নি।”
জবাবে শারমিন জাহান আরো বলেছিলেন, ‘মাস্ক সরবরাহকালে আপনার প্রতিষ্ঠানের একজন হিসাব কর্মকর্তা ও একজন সহকারী পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা যাচাই সাপেক্ষেই মাস্কগুলো গ্রহণ করে। তাই কর্তৃপক্ষের অগোচরে মাস্ক সরবরাহের কোনো অবকাশ ছিল না। এক্ষেত্রে ‘অনৈতিক’ কিছু সংগঠিত হওয়ার বিষয়টিও অপ্রাসঙ্গিক। তবু অত্র প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত এন-৯৫ মাস্ককে ঘিরে গ্রাহক অসন্তুষ্টির জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’