বিপুল ভোটে ফের জিতলেন ‘আলোচিত’ কাদের মির্জা
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা বিজয়ের হ্যাটট্রিক করলেন।
আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফলাফল গণনা করা হয়। এখানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হয়। ফলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।
বসুরহাট পৌরসভায় মোট কেন্দ্র নয়টি। সব কেন্দ্রেরই ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আবদুল কাদের মির্জা ভোট পেয়েছেন ১০ হাজার ৭৩৮টি। অপরদিকে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন এক হাজার ৭৭৮ ভোট। অপর স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন (জামায়াতে ইসলামী) পেয়েছেন এক হাজার ৪৫১ ভোট।
এ পৌরসভায় প্রথমবারের মতো ইভিএমের মাধ্যমে নয়টি ওয়ার্ডে নয়টি কেন্দ্রের ৬১টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। আলোচিত এ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন র্যাবের তিনটি টিম, চার প্লাটুন বিজিবি, ২২০ জন পুলিশ সদস্য, ৮১ জন আনসার বাহিনী ও নয়টি কেন্দ্রে নয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া নয়জন প্রিজাইডিং অফিসার ও নয়জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ছিলেন।
বসুরহাট পৌরসভায় তিনজন মেয়র পদপ্রার্থী, সাতজন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও ২৫ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ পৌরসভায় ২১ হাজার ১১৫ ভোটার।
হারলেও ফল মানব : বিএনপির প্রার্থী
দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচনে তুমুল আলোচিত নোয়াখালীর বসুরহাটে ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট বিএনপির প্রার্থী। কেন্দ্র পরিদর্শন করে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, কোথাও সমস্যা নেই। সব দলের এজেন্ট রয়েছে। সকাল ৮টায় ভোট শুরুর পর পর তিন প্রার্থীই ভোটাধিকার প্রয়োগ করে কথা বলেন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে।
সকালে বসুরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিয়ে ধানের শীষের প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যেই দুই-চারটা কেন্দ্রে গেছি সেখানে সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। কোনো সমস্যা নাই। জয়-বিজয় আল্লাহর হাতে।’
এই ভোটে হেরে গেলেও কোনো আফসোস থাকবে না জানিয়েছেন বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘বিজয় হলেও ভালো, পরাজয় হলেও আমরা সুন্দরভাবে মেনে নেব।’ তিনি আরো বলেন, ‘একটা পোস্টার কোথাও ছেঁড়া হয়নি, কোথাও কোনো অসুবিধা হয়নি।’
এ রকম সুন্দর নির্বাচনি পরিবেশের জন্য বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী বর্তমান মেয়র কাদের মির্জা ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। নির্বাচনের ফলাফল মানার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘অবশ্যই আমি ফলাফল মেনে নেব। এই সুন্দর নির্বাচনের ফলাফল না মানলে আমি কেন রাজনীতি করি?’
পরাজিত হলেও বিজয়ীকে অভিনন্দন জানাব : কাদের মির্জা
সকালে উদয়ন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভোট দেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র কাদের মির্জা। জয়ের ব্যাপারে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ভোট নিয়ে তাঁর যে শঙ্কা ছিল, তা এখন নেই বললেই চলে।
তবে কোনো কারণে পরাজিত হলেও তা ইতিবাচকভাবে নেবেন জানিয়ে কাদের মির্জা বলেন, ‘যদি নির্বাচিত না হই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যিনি নির্বাচিত হবেন, তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে আমি বাড়ি ফিরে যাব।’
ভোটে আরেক প্রার্থী মোশাররফ হোসেন জামায়াত নেতা। তবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তাঁর দলীয় প্রতীকে ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল না। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েছেন মোবাইল ফোন প্রতীকে।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা গত ১০ জানুয়ারি থেকেই সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে নানা বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তাঁর এই অবস্থানের কারণেই পৌরসভাটি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। ভোটের চিত্র তুলে ধরতে দেশের প্রধান প্রধান প্রায় সব গণমাধ্যমের প্রতিনিধিই এখন বসুরহাটে।