‘ভাইয়ের লাশটা যদি অন্তত পাই, মা-বাবাকে সান্ত্বনা দিতে পারব’
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের শাহজাদপুর গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে মোহাম্মদ জুয়েল (৩০)। কর্মরত ছিলেন সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে। ওই ডিপোতে গত শনিবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের পর থেকেই নিখোঁজ জুয়েল।
দুর্ঘটনার খবর শোনার পর পরই কোম্পানীগঞ্জ থেকে ভাইয়ের সন্ধানে চট্টগ্রামের ছুটে যান বড় ভাই মোশারফ হোসেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে কোনো আহত-নিহত ব্যক্তিকে আনা হলেই ছুটে যাচ্ছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে দেখছেন ভাইয়ের সন্ধান মিলেছে কি না। কিন্তু, দুর্ঘটনার দীর্ঘ ৩৫ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও খোঁজ মেলেনি জুয়েলের। তাই, ভাইয়ের সন্ধান পেতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ারের সামনে নির্ঘুম রাত পার করেছেন মোশারফসহ তাঁর স্বজন।
চমেক হাসপাতালের সামনে আজ সোমবার সকাল ৮টার দিকে মোশারফের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বিএম কনটেইনার ডিপোতে গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন জুয়েল। অগ্নিকাণ্ডের খবর রাতেই স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন তিনি। তখন তাঁর স্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন, তুমি চলে এস। কিন্তু, ভাই আসেনি। পরে তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। আমি চট্টগ্রামে এসে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করেও ভাইয়ের সন্ধান পাইনি। তাঁর কী পরিণতি হয়েছে জানি না। উৎকণ্ঠায় আছি। যদি অন্তত তাঁর লাশটা পাওয়া যায়, তাহলেও মা-বাবাকে সান্ত্বনা দিতে পারব। এখন আছি আমার ভাইয়ের অপেক্ষায়।’
এদিকে বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অগ্নিনির্বাপণে কাজ করে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যেরা। অন্যদিকে, ডিপোর আগুন ও বিস্ফোরণে নিহতদের শনাক্তে চমেক হাসপাতালে ডিএনএ টেস্ট শুরু হচ্ছে আজ সোমবার সকাল থেকে।
ডিপোতে থাকা কনটেইনারে দাহ্য পদার্থ রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু, কারও কাছ থেকে জানা যাচ্ছে না যে, কোন কনটেইনারে কী ধরনের দাহ্য পদার্থ রয়েছে। সে কারণে, ডিপোর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। গতকালই ডিপোর সার্বিক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনার ইঞ্জিনিয়ার কোর। তারাও সেখানে কাজ করছে।
এদিকে, চমেকে থাকা ১২টি লাশের মধ্যে কেবল একটি লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি লাশ শনাক্তে ডিএনএ টেস্ট শুরু হবে।
এ ছাড়া চমেকে চিকিৎসাধীন আহতদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জনের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। নগরীর অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালেও ডিপোকাণ্ডে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে এখন পর্যন্ত বিএম ডিপোকাণ্ডে ৪৯ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৪৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, আজ সীতাকুণ্ডে ঘটনাস্থল ও চমেকে যেতে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।