‘মামলা করে কিছু হয় না, কী দরকার ঝামেলা বাড়ানোর?’

রাজধানীর শান্তিনগরে বাস থেকে নামার সময় বাসের চাকায় পিষ্ট হন কানিজ ফাতেমা (৩৫)। কানিজের ঊরু থেকে হাঁটু পর্যন্ত ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। সকাল সাড়ে ৯টায় ওই দুর্ঘটনা ঘটার পর কানিজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুপুর ১টার দিকে মারা যান তিনি।
বিকেলের দিকে কানিজ ফাতেমার লাশ নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেন তাঁর ভাই মো. সামসুদ্দীন। থানায় মামলা দায়ের প্রসঙ্গে সামসুদ্দীন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই দেশে মামলা করে কিছু হয় না। কী দরকার ঝামেলা বাড়ানোর? যার জন্য মামলা করব, সেই তো আর নেই।’
‘ঝামেলা’ এড়াতে নিহত কানিজের স্বজনরা চায় না মামলা করতে। তবে পল্টন মডেল থানা পুলিশ ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তর করতে নারাজ। পুলিশ চায় মামলা হোক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিহত কানিজ ফাতেমার লাশের ঠাঁই হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
নিহত কানিজ ফাতেমার ছোট ভাই মো. সামসুদ্দীন আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ছাড়্পত্র পেয়েছি। আমরা মামলা করতে চাচ্ছি না। লাশ নিয়ে মিরপুরে চলে যাচ্ছি। তারপর ফরিদপুর সদরে নিজ বাড়িতে লাশ নিয়ে চলে যাব। এই দেশে মামলা করে কিছু হয় না। কী দরকার ঝামেলা বাড়ানোর? যার জন্য মামলা করব, সেই তো আর নেই।’
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজী আশরাফ। ওই সময় তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘এই মাত্র কানিজের স্বজনরা তাঁর লাশ নিয়ে রওনা দিচ্ছে। পরিবার এই ঘটনায় মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।’
সন্ধ্যার দিকে রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিকী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী ওই নারীর পরিবার মামলা করতে চাচ্ছেন না। এমনকি পোস্টমর্টেমও করতে চাচ্ছেন না। পরিবারকে আমরা বোঝাতে পারছি না যে এখানে একটি শাস্তির বিষয় আছে। যাইহোক, পোস্টমর্টেম না করলেও মামলায় সমস্যা হয় না। কিন্তু তাঁরা মামলা করতে না চাওয়ায় আমরা পোস্টমর্টেম ছাড়া লাশ ছাড়তে পারব না। তাই পুনরায় লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নেওয়া হয়েছে।’
কেন মামলা করতে চায় না পরিবার-এমন প্রশ্নে ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ওই নারীর ভাই বলছেন, মামলা করে কী হবে? বোন তো মারাই গেছেন। সে তো আর ফিরে আসবে না। তাই তাঁরা মামলা করতে চান না।’
এর আগে মো. সামসুদ্দীন বলেছিলেন লাশ নিয়ে চলে যাচ্ছি। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পুলিশ বলছে আপনারা (মিডিয়া) নাকি কমপ্লেইন করেছেন। তাই পুলিশ এখন বলছে মামলা ছাড়া লাশ নিয়ে যেতে পারবেন না। এখন থানায় যাচ্ছি। দেখি কী হয়? সেজন্য আবার আমার বোনকে মর্গে নিয়ে গেছে।’
সকালে শান্তিনগর মোড়ে আল মক্কা পরিবহনের একটি বাস থেকে নামেন কানিজ ফাতেমা। বাস থেকে নেমে ভালোভাবে দাঁড়াতেও পারেননি, এমন সময় বাসের চালক আচমকা বাসটি আবার চালাতে শুরু করেন। এতে বাসের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান কানিজ। ওই সময় বাস তাঁর পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।