মুক্তিযোদ্ধার মেয়ের ‘আত্মহত্যা’, এনজিওর চাপের অভিযোগ
পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় সাবিনা খাতুন (৩৫) নামের এক নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে। আজ মঙ্গলবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাংড়াগাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে পরিবারের দাবি, কিস্তির টাকার জন্য এনজিওকর্মীর চাপে সাবিনা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
নিহত সাবিনা একই উপজেলার বিএলবাড়ি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের মেয়ে এবং হাংড়াগাড়ি গ্রামের দিনমজুর হাফিজুল ইসলামের স্ত্রী।
নিহত সাবিনার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, হাফিজুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী সাবিনা খাতুনের নামে গত বছরের আগস্ট মাসে সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন অ্যান্ড প্রাক্টিসেস (সিদীপ) এনজিওর ভাঙ্গুড়া ব্রাঞ্চ থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বামী হাফিজুল ইসলামের আয় রোজগার কমে যায়। এ অবস্থায় গত পাঁচ মাসের কিস্তি বকেয়া পড়ে। আজ সকালে ওই এনজিওর দুই মাঠকর্মী হাফিজুলের বাড়িতে উপস্থিত হন। তখন হাফিজুল বাড়িতে ছিলেন না। ওই দুই কর্মী বকেয়া কিস্তির টাকা পরিশোধ করার জন্য সাবিনাকে চাপ দেন। এ নিয়ে এনজিও কর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় সাবিনার। একপর্যায়ে সাবিনা ঘরে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরিস্থিতি দেখে এনজিওকর্মীরা সেখান থেকে সটকে পড়েন।
পরে স্বজনরা সাবিনাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সাবিনার জা শেলী খাতুন বলেন, ‘কিস্তি তোলার স্যারেরা আমার জায়ের কাছে কিস্তির টাকা চাইলে দিতে দেরি হবে বলে জানান। এ নিয়ে স্যারেরা তাঁকে (সাবিনা) নানাভাবে কটূক্তি করেন। তখন তাদের বাড়ির উঠানে রেখে আমার জা ঘরে গিয়ে গলায় দড়ি দেন।’
এদিকে, এ ঘটনার সত্যতা জানতে সিদীপ এনজিওর মাঠকর্মী আরিকুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। সংবাদকর্মীর পরিচয় শুনে তিনি কলটি কেটে দেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে সিদীপের ব্যবস্থাপক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই গৃহবধূ নিজে থেকেই কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য আমাদের কর্মীদের ডেকেছিলেন। তাই তাঁর বাড়িতে তারা গিয়েছিলেন। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা নিয়ে তাঁকে কোনো কটূক্তি করা হয়নি। কথাবার্তার একপর্যায়ে হঠাৎ ওই গৃহবধূ নিজ ঘরে গিয়ে গলায় দড়ি আত্মহত্যা করেন।’
ভাঙ্গুড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল কাদের বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যার বিষয়টি জানালে মৃতদেহটি উদ্ধার করে পাবনা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।’
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘কিস্তি দিতে না পারায় গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কিস্তির জন্য চাপ দেওয়া আইনবিরোধী। সেই কাজটিই করেছে অভিযুক্ত এনজিও। সংশ্লিষ্ট এনজিওর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’