লবণ নিয়ে গুজব, বিভিন্ন জেলায় অভিযান

গতকাল মঙ্গলবার গুজব ছড়িয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রির অভিযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া অনেক ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়। এদিকে এই গুজবে কান না দেওয়ার জন্য সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন।
সাভার থেকে প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান জানিয়েছেন, আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন ব্যবসায়ীকে ৯০ হাজার টাকা ও উলাইল এলাকায় দুই ব্যবসায়ীকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া হেমায়েতপুরে চার ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদের নেতৃত্বে আশুলিয়ার বাইপাইলের শরিফ স্টোর, সবুজ বাণিজ্যলয় ও ভাই ভাই স্টোর নামে তিনটি দোকানকে মোট ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ছাড়া সাভারের উলাইল এলাকায় সাভার রাজস্ব সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি দোকানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় বাড়তি দামে লবণ বিক্রির অভিযোগে দুই ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার ও ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে, আমিনবাজার রাজস্ব সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে হেমায়েতপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চার ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
এদিকে, সাভার মডেল থানা পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

নাটোর থেকে প্রতিনিধি হালিম খান জানিয়েছেন, লবণ নিয়ে তৈরি হওয়া গুজব নিরসনে নাটোরে জরুরি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মোহম্মদ শাহরিয়াজের সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাঁর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় দেশে লবণের কোনো সংকট নেই; বরং লবণ মজুদ রয়েছে জানিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
সভায় পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজানসহ অন্যরা উপস্থিতি ছিলেন।
এদিকে যেকোনো কারসাজি মোকাবিলায় নাটোরের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
নরসিংদী থেকে প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ সাহা জানিয়েছেন, গুজব ছড়িয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রির অভিযোগে গতকাল রাতে চার ব্যবসায়ীকে আটক করেছে পুলিশ। মাধবদী ও বেলাব বাজারে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। গতকাল রাতে নরসিংদী বাজার পরিদর্শনকালে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আটক ব্যবসায়ীরা হলেন নরসিংদীর মাধবদী বাজারের সানাউল্লাহ স্টোরের মালিক মো. সোহেল (৩০) ও শফিউল্লাহ (৪০) এবং বেলাব বাজারের ব্যবসায়ী ঝন্টু দে (৪৫) ও বাকি বিল্লাহ (৩৫)।
পুলিশ সুপার বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুজব ছড়িয়ে অধিক দামে লবণ বিক্রির অভিযোগে মাধবদী বাজার ও বেলাব বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বেশি দামে লবণ বিক্রি করায় মাধবদী বাজারের সানাউল্লাহ স্টোরের মালিক মো. সোহেল ও শফিউল্লাহকে আটক করা হয়। অন্যদিকে বেলাব বাজারে বেশি দামে লবণ বিক্রি করায় ঝন্টু দে ও বাকি বিল্লাহ নামের দুই ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
পুলিশ সুপার বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসাধারণের উদ্দেশে বলেন, কেউ যদি বেশি দামে লবণ বিক্রি করেন এবং কেউ কেনেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের চাহিদার তুলনায় ছয় গুণ বেশি লবণ মজুদ আছে।

এ সময় সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেদ আহমেদ, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক বিপ্লব কুমার দত্ত, নরসিংদী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি বাবুল সরকার, সাধারণ সম্পাদক আ. মোতালিব ভূঁইয়া, নরসিংদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মাখন দাসসহ বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহ থেকে প্রতিনিধি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের লবণ মজুদদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসন অভিযান শুরু করেছে। গতকাল রাত ৮টার দিকে জেলা শহরের চাকলাপাড়ায় অভিযান চালিয়ে চার টন লবণ জব্দ করা হয়। এ সময় মোহাম্মদ আলী নামের মজুদদারকে আটক করা হয়।
এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সরোজ কুমার নাথ ও পুলিশ সুপার (এসপি) হাসানুজ্জামান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা।
অভিযানের বিষয়ে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, গতকাল বিকেলে হঠাৎ করে বাজারে লবণের ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যায়। এরপর অভিযান শুরু করা হয়। এ সময় কমপক্ষে চার টন লবণসহ একটি গুদাম সিলগালা করে দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে বাজারে লবণের সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এসপি হাসানুজ্জামান জানান, গতকাল বিকেল থেকে মজুদকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। এখনো অভিযান চলছে।
এদিকে বিকেলে জেলা শহরের বিভিন্ন বাজার পরিদর্শনকালে দেখা যায়, দোকানগুলোতে লবণ কেনার জন্য ছুটছে মানুষ। লাইনে দাঁড়িয়ে লবণ কিনছেন অনেকেই। এ সময় সুযোগ পেয়ে পাইকারি দোকান মালিকরা লবণের দাম বৃদ্ধি করে দেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেলা শহরের বেপারীপাড়ার কয়েকটি গুদামে অভিযান চালায় প্রশাসন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতিনিধি নাফিজ আশরাফ জানিয়েছেন, লবণের দাম বেড়ে যাওয়ার গুজবে নারায়ণগঞ্জের পাইকারি বাজারসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দোকানে দোকানে লবণ বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। এরই মধ্যে ফেসবুকে লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, শহরের নিতাইগঞ্জে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দাম বেড়ে যাওয়ার প্রচারণার পাশাপাশি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে আবদুল করিম নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান ওসি।
এদিকে কোনো দুষ্কৃতকারী গুজব ছড়ালে সঙ্গে সঙ্গে সহায়তা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে প্রতিনিধি শহীদুল ইসলাম বাবর জানিয়েছেন, লোহাগাড়া উপজেলায় বেশি দামে লবণ বিক্রি করায় পাঁচ ব্যবসায়ীকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গতাকাল রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত লোহাগাড়ার বটতলী স্টেশনের দোকানগুলোতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌছিফ আহমেদ এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদ্মাসন সিংহর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রি করার অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯-এর ৪০ ধারায় বটতলীর কাঁচাবাজারের তানভীর স্টোরকে পাঁচ হাজার টাকা, কামাল স্টোরকে ২০ হাজার টাকা ও হাজি আলী অ্যান্ড সন্সকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অন্যদিকে, আলুঘাট রোডে মেসার্স ফরিদ স্টোরকে ২০ হাজার টাকা ও এম রহমান অ্যান্ড সন্সকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌছিফ আহমেদ জানান, লোহাগাড়াসহ সারা দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণ মজুদ রয়েছে। একটি চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য গুজব ছড়িয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পাশাপাশি গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এ ছাড়া কোথাও কোনো দোকানদার বেশি দামে লবণ বিক্রি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেন তৌছিফ আহমেদ।