শার্শায় নৌকার তিন শতাধিক নেতাকর্মী বাড়িছাড়া
যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নৌকা প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকদের শতাধিক বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চলছে। নৌকায় ভোট দেওয়ায় ইউনিয়নের ১০ গ্রামের তিন শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক বাড়িছাড়া হয়েছে।
নৌকার প্রার্থী বাগআঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস কবির বকুল ভোটের পর থেকেই প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে নিরাপদ স্থানে রয়েছেন।
শার্শা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল হক মঞ্জু অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল খালেকের ইন্দনে তার সমর্থকরা প্রকাশ্যে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কোন শক্তির বলে বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল খালেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা চালায়? আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।’
ইলিয়াস কবির বকুল আরও বলেন, ‘প্রশাসনকে জাননোর পরও এখনও নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর হচ্ছে এখনও।’
বাগআঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সনাতনকাঠি, বামুনিয়া, ট্যাংরা, বসতপুর কলোনি-১, বসতপুর কলোনি ২, ঘোষপাড়া, বাগআঁচড়া পূর্ব ও উওরপাড়া, পিঁপড়াগাছি ও সমাটা গ্রামের মানুষ খালেক আতংকে রাতে বাড়ি থাকতে পারছেন না।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তির ভাই সদ্য নির্বাচিত বিদ্রোহী চেয়ার্যমান আব্দুল খালেকের নির্দেশে তার সমর্থকরা হামলা ভাঙচুর চালাচ্ছে বলে দাবি বকুলের।
ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, নৌকার সমর্থক হওয়ার কারণেই তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। অবশ্য হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এদিকে পুলিশ বলছে যেসব স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে সেসব স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ গ্রহণসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত ২৮ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনে যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ায় ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইলিয়াস কবির বকুলকে পরাজিত করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল খালেক। বিজয়ের ঘোষণা আসার পর রাতে তার সমর্থকরা নৌকার নির্বাচনি অফিস থেকে প্রতীক নামিয়ে নিয়ে নিজ অফিসে টাঙিয়ে দিয়েছে নৌকা। এমনকি রাতভর শতাধিক বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে নৌকার কর্মীসমর্থক ও তাদের বাড়ির নারী-শিশুরা। বাড়ি ভাঙার পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয়েছে গাড়ি, ইজিবাইকসহ দোকানপাটও।
ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, কেবল নৌকার সমর্থন দেওয়ার কারণে তাদের ওপর হামলা হয়েছে এবং বাড়ি ছাড়া হয়েছেন পুরুষরা।
বিজয়ী বিদ্রোহী চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আওয়ামী লীগ করি। আমি কাউকে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের নির্দেশনা দেইনি। আমি নিজে মাইকিং করে বলি আইন কেউ নিজের হাতে নেবেন না। আমরা পরস্পর ভাই ভাই। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তৃপ্তির সঙ্গে আমাদের কোনো পারিবারিক সম্পর্ক নেই। তাদের সঙ্গে আমাদের আদর্শগত দ্বন্দ্ব।’
যশোর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নির্বাচন পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বভাবিক রাখতে। বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আমাদের কাছে এখনও পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসেনি।
যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, ‘আমি নৌকার প্রার্থী ইলিয়াস কবির বকুল ও শার্শা থানার ওসি সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো পরিদর্শন করেছি। ওসি সাহবেকে বলেছি নৌকার কর্মী সমর্থক ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হচ্ছে বিষয়টি আপনি ব্যবস্থা নিন। তারপরও এখনও পর্যন্ত হামলা ভাঙচুর অব্যাহত আছে।’