সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর জানাজা অনুষ্ঠিত

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আজ বুধবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, কূটনীতিক, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানাজায় অংশ নেন। পরে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা।
জানাজা শেষে সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর কফিনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়া শ্রদ্ধা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও কূটনীতিকরা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন মুক্তিযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির পেছনে মোয়াজ্জেম আলীর অবদানের কথা স্মরণ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোনেম বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং আমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আমি ব্যক্তিগতভাবে গর্বিত, আমরা একজন অত্যন্ত ভালো মানুষ পেয়েছিলাম। যিনি সব সময় পূর্ণাঙ্গভাবে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিদের ভালো থাকার বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। তিনি আমাদের সামনে আদর্শ পুরুষ হয়ে থাকবেন। তাঁর চলে যাওয়ায় আমরা একজন ভালো উপদেশদাতাকে হারালাম। আল্লাহ উনার আত্মার ওপর মেহেরবান হোন। উনাকে বেহেশত নসিব করুন।’
গত সোমবার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাবেক এই কূটনীতিকের মৃত্যু হয়।
সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন মোয়াজ্জেম আলী। মেয়াদ শেষে এ মাসেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাতিজা সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর জন্ম ১৯৪৪ সালে সিলেটে। বড় ভাই এসএম আলী ছিলেন ডেইলি স্টারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মোয়াজ্জেম আলী ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে ওয়াশিংটনে কর্মরত অবস্থায় বিদ্রোহ করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দেন তিনি। এরপর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
দীর্ঘ কর্মজীবনে ভুটান, ইরান ও ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন মোয়াজ্জেম আলী। ওয়াশিংটন, ওয়ারশ, জেদ্দার পাশাপাশি নয়াদিল্লি মিশনেও তিনি কাজ করেছেন।
মোয়াজ্জেম আলী বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে ইউনেস্কোর কাছে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস খসড়া প্রতিবেদন দিয়ে ভাষা আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে ভূমিকা রাখেন।
পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ সালে অবসরে যান পেশাদার এই কূটনীতিক। পরে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার তাঁকে কূটনৈতিক দায়িত্বে ফিরিয়ে এনে হাইকমিশনার করে দিল্লি পাঠায়। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় ওই দায়িত্ব পালন শেষে সম্প্রতি তিনি দেশে ফেরেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এই কূটনীতিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও শোক প্রকাশ করে টুইট করেছেন।