বাঘায় বাস ও অটোরিকশাচালকদের সংঘর্ষ
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাঘা উপজেলা বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস ও অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর রাজশাহী-বাঘা পথে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের বাঘা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী জানান, গত ২৬ মে বাঘা থানায় বাস শ্রমিক ও অটোরিকশাচালকদের নিয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে রাজশাহী-বাঘা পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশা না চালিয়ে বাঘা-ঈশ্বরদী পথে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপরও আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ অটোরিকশা চালকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে উপজেলা বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হয়ে বাস শ্রমিকদের ওপর চড়াও হন। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় অটোরিকশা চালকেরা সোনার বাংলা, উর্মি, প্যারাডাইস, সবুজ সাথী, রনি ও জয় গোপাল এন্টারপ্রাইজের বাস ভাঙচুর করে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
অটোরিকশাচালকদের হামলায় বাস শ্রমিক রণজিত, নুরুজ্জামান, সাধু, শফিকুল, নাজির, ইন্না ও টিটো গুরুতর আহত হন। এঁদের মধ্যে রণজিত ও নুরুজ্জামানকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকিরা চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
অন্যদিকে বাঘা সিএনজি-মালিক সমিতির সভাপতি মিলন আলী জানান, বাস শ্রমিকরা দীর্ঘ দিন ধরে বাঘা-চারঘাট ও রাজশাহী পথে অটোরিকশা চালাতে বাধা দিচ্ছেন। এর আগে গত মাসে এ পথে বিআরটিসির দোতলা বাস চলাচল উদ্বোধন করা হলে তাঁরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয়। এভাবে তারা অটোরিকশাও চালাতে দিচ্ছেন না। এ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে স্থানীয় প্রশাসন পাঁচ দিনের মধ্যে বসে একটি সমাধান করে দেবে বলে বাস শ্রমিকদের দাবিতে এ পথে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করেন।
মিলন আলী জানান, পাঁচ দিন পার হওয়ার পরও কোনো সমাধান না হওয়ায় আজ সোমবার অটোরিকশাচালকরা সকালে বাঘা বাসস্ট্যান্ডের ১০০ গজ পশ্চিমে থাকা স্ট্যান্ডে অটোরিকশা সারিবদ্ধ করে রাখেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিনা উসকানিতে বাস শ্রমিকরা আকস্মিকভাবে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। পরে তাঁরাও পাল্টা আক্রমণ করেন। এ সময় বাস শ্রমিকরা স্ট্যান্ডে থাকা ২০/২৫টি অটোরিকশা ভাঙচুর চালায়। এ সময় অটোরিকশামালিক ও চালকদের মধ্যে ১৮ জন আহত হন। আহতদের চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তবে আহতদের নাম তিনি জানাতে পারেননি।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান জানান, বাস ও অটোরিকশা শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ভাঙচুর এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলছিল। পুলিশ কয়েটি রাবার বুলেট ছুঁড়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুর সোয়া ১টার দিকে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাদল চন্দ্র হালদার তাঁর কার্যালয়ে বাস ও অটোরিকশা শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে পুঠিয়া সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আসলাম উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাদল চন্দ্র হালদার জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সাময়িকভাবে বাস ও অটোরিকশা চলাচল করবে। কয়েকদিনের মধ্যে জেলা প্রশাসক উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করবেন। সেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উভয়পক্ষ এ বিষয়ে একমত হলেও রাত ৯টা পর্যন্ত রাজশাহী পথে বাস ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রয়েছে।