‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অসাংবিধানিক’
কোনো দেশি-বিদেশি ব্যক্তি বা সংস্থা পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ কিংবা বৈঠক করতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী অথবা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে -স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এই নির্দেশনাকে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। এই নির্দেশনা অবিলম্বে প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক নির্দেশনা নিয়ে নাগরিক সমাজের উদ্যোগ পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে আবুল মকসুদ আরো বলেন, নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করা না হলে এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আবুল মকসুদ বলেন, যাদের মাথা থেকে এ ধরনের নির্দেশনা রচিত হয়েছে তাদের মাথায় গণ্ডগোল আছে। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সরকারের ভেতর থেকেই কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করছে।
বাংলাদেশের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কোনো ব্যক্তি যদি অপাহাড়ি কাউকে বিয়ে করেন, তবে তাদের বাসরঘরেও বিজিবি বা সেনাসদস্য উপস্থিত থাকবেন কি না সে প্রশ্ন তোলেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী এমনটাই হবে বলে মনে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের এক সভা থেকে পার্বত্য তিন জেলার জন্য জারি করা ১১টি নির্দেশনার মধ্যে একটি হচ্ছে আলোচ্যটি। গত ৪ ফেব্রুয়ারি এসব নির্দেশনা সংবলিত প্রজ্ঞাপনটি (সার্কুলার) তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই সভা থেকে শান্তিচুক্তিবিরোধী সশস্ত্র সংগঠন, স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক চাঁদাবাজি-খুন-অপহরণ, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান রোধকল্পে সেনাবাহিনী-পুলিশ-বিজিবি-আনসারের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন বা সিএইচটি কমিশনের সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের মধ্যে একাংশ আছে যারা শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন চায় না। এই অভিযানটি তাদের বিরুদ্ধেই পরিচালনা করা উচিত। এসব নির্দেশনাকে অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক, মানবাধিকার এবং শান্তিচুক্তির পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, দেশ ভূমিদস্যু আর কালোবাজারিদের হাতে চলে গেছে, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে নেই। তারই ফল এ ধরনের নির্দেশনা। একে গণতন্ত্রের অশনিসংকেত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনায় আরো বলা হয়, কূটনীতিকরা ছাড়া সাধারণ বিদেশি নাগরিকরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণ করতে চাইলে অন্তত এক মাস আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া সিএইচটি কমিশনের কোনো আইনগত ভিত্তি না থাকায় এর নাম পরিবর্তন করতেও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়।
সিএইচটি কমিশন মূলত বাংলোদেশ ও যুক্তরাজ্যের আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি কমিশন।