উদ্বোধনের অপেক্ষায় বৃহত্তম মেরিন ড্রাইভ

কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং অর্থনৈতিক অঞ্চলের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। সুদীর্ঘ এই পথের একপাশে দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রসৈকত, অন্যপাশে নারিকেল, সুপারি, ঝাউ বীথি। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার এই পথটুকু পাড়ি দিতে এতদিন নানা কাঠখড় পোড়াতে হতো। সময়ের ব্যবধানে সমুদ্রঘেঁষা একটি সড়কপথ তথা মেরিন ড্রাইভ বদলে দিয়েছে সেই চিত্র। পৃথিবীর বৃহত্তম এই মেরিন ড্রাইভ ধরে দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রমে সময় লাগবে মাত্র দুই ঘণ্টা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মাণ প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন (ইসিএ) এই সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করেছে। আগামী ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কটির উদ্বোধন করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা ছিল ২০১৮ সাল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই সড়কটির নির্মাণ সম্পন্ন করতে পেরেছে ইসিএ। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৪০ কোটি টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার কক্সবাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর ইসিএ-১৬-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে এম মেহেদী হাসান জানান, বিশ্ব পর্যটনের দুয়ার খুলতে চলেছে সড়কটি। সড়কের ধারে রয়েছে নানা প্রজাতির গুল্ম-লতা ও ফলদ গাছ-গাছালি। সাগরতীর আর পাহাড়ের পাদদেশে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত মেরিন ড্রাইভ সড়কের ভ্রমণই হবে পর্যটকদের কাছে বড় পাওয়া।
সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা জানান, ১৯৯৩ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু শুরুতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী পয়েন্টে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ঠিকাদারের নির্মিত দুই কিলোমিটার সড়ক সাগরেই বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৫ সালে এই সড়কের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইসিএকে। এরপর সড়কটির দৈর্ঘ্য ৪৮ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ৮০ কিলোমিটার করা হয়।
মেহেদী হাসান জানান, তিন ধাপে নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করা হয় মেরিন ড্রাইভের। প্রথম ধাপে ২৪ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে ২৪ কিলোমিটার ও তৃতীয় ধাপে ৩২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
মেরিন ড্রাইভ সড়কটি নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনীকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় উল্লেখ করে ইসিএর অধিনায়ক বলেন, প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতায় সড়কের মাটি সাগরের উত্থাল ঢেউয়ে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। লোনা হাওয়ায় ব্যবহৃত রডে ধরে মরিচা। তদুপরি পাহাড়ের পাদদেশ এবং সাগরের তীর দিয়ে এ রকম দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের সময় ২০১০ সালের ১৫ জুন হিমছড়ি ইসিএ ব্যারাকে টানা ভারি বর্ষণে আকস্মিক পাহাড়ধসে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান ছয় সেনা।
সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা মনে করেন, মেরিন ড্রাইভটি একদিকে সাগরের তীরে বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। অন্যদিকে বিস্তীর্ণ জায়গা-জমি ও ফসল রক্ষা পাবে সাগরের ভাঙন থেকে। একই সঙ্গে পর্যটনশিল্পেও যোগ হবে নতুন মাত্রা।