মেয়ের সঙ্গে পাস, জয়ের গল্প লিখলেন ইসমত আরা
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/07/24/photo-1500915973.jpg)
মায়ের একসময় ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা করার। হয়ে ওঠেনি। মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছেন। ধাপে ধাপে এগোচ্ছে মেয়ে। মায়ের ইচ্ছেটাও জানান দিল মেয়ের পড়া দেখে। এর পর থেকে শুরু জীবনের নতুন গল্প। অষ্টম শ্রেণি থেকে মা ও মেয়ে একসঙ্গে পড়াশোনা করছেন।
চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় একই সঙ্গে পাস করেছেন মা ইসমত আরা (৪৫) ও মেয়ে তানজিলা আফরিন। উভয়ই এ গ্রেড পেয়েছেন। তানজিলার স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। অন্যদিকে তানজিলার মা ইসমত আরাও চালিয়ে যাবেন পড়াশোনা। তিনি আইনজীবী হয়ে নির্যাতিতা নারীর পক্ষে লড়াই করতে চান।
ইসমত আরা জয়পুরহাট পৌর এলাকার শহরতলির আদর্শপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। তাঁর স্বামীর নাম জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জেলা জজ আদালতের সাবেক পেশকার। স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন তিনি। ওই দম্পতির একমাত্র মেয়ে তানজিলা আফরিন।
মা-মেয়ের গল্প
ইসমত আরা নিজের মেয়ের কথাই বললেন আগে। তানজিলা এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন। এরপর ভর্তি হন জয়পুরহাট সরকারি কলেজে। আর তিনি (ইসমত আরা) ভর্তি হন জেলার পাঁচবিবি উপজেলার গ্রামে অবস্থিত ‘আয়মা-জামালপুর টেকনিক্যাল কলেজে।’
ঘর সংসার, রান্নাঘর সামলে নিজ বাড়িতেই লেখাপড়া শুরু করেন ইসমত আরা। এভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার একপর্যায়ে অষ্টম শ্রেণি থেকে মা-মেয়ে একই ক্লাসে পড়াশোনা শুরু করেন। এসএসসি পর্যন্ত ইসমত গোপনে বাড়িতেই পড়তেন। মেয়ে তানজিলা স্কুলে যেতেন আর মাকে পড়াশোনায় সাহায্য করতেন।
এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন মা ও মেয়ে দুজনই। তানজিলা জিপিএ ৫ পান। অন্যদিকে ইসমত এ গ্রেডেই পাস করেন। তবে এ পর্যায়েও যাত্রা থামিয়ে দেননি ইসমত আরা।
পথটা ছিল না সহজ
সমাজ কীভাবে তাঁর পড়াশোনা করাটা মেনে নেবে- এ নিয়ে নিজের মধ্যেই সংশয় ছিল ইসমতের। সমাজের অনেকে কটু কথাও বলেছিলেন। কিন্তু দমে যাননি ইসমত আরা। মেয়েকে কলেজে পাঠিয়ে নিজে সময় বের করে যেতেন নিজ কলেজ আয়মা-জামালপুর টেকনিক্যাল কলেজে। ক্লাস শেষে সংসার, রান্না সামলে আবার বসতে হয়েছে পড়া নিয়ে। প্রস্তুতি নিতে হয়েছে পরবর্তী ক্লাসের, পরবর্তী পরীক্ষার।
মা ও মেয়ের একই সঙ্গে এইচএসসিতে পাস করার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। খবর ছড়িয়ে পড়ায় মা-মেয়েকে একনজর দেখতে ছুটে আসেন তাঁদের শিক্ষক, সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা।
আয়মা-জামালপুর টেকনিক্যাল কলেজের প্রভাষক কনক সরকার বলেন, ‘আমাদের ছাত্রী ইসমত আরা শিক্ষকদের অনেকের চেয়ে বয়সে বড় হলেও তিনি শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান করেছেন। তাঁর সাফল্যে কলেজের শিক্ষক হিসেবে আমরাই সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি।’
তবে এই ফলাফলে মা ইসমত আরা সন্তুষ্ট হলেও আরো ভালো ফলাফল আশা করেছিলেন তানজিলা। তবে এসএসসির মতো আগামীতেও ভালো করবেন বলে আশা তানজিলার।
এইচএসসি পরীক্ষায় স্ত্রী ও মেয়ের আরো ভালো ফলাফলের আশা করলেও হতাশ হননি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, আগামীতে স্ত্রী ও মেয়েকে লেখাপড়ায় এগিয়ে নিতে তিনি কোনো রকমের কার্পণ্য করবেন না।