এবার সরকারি সদনে নির্দয় পিটুনির ভিডিও
বরিশালের শিশু সদনের বাসিন্দা আঁখি (৯ ) ও ডালিয়ার (৮) অপরাধ ছিল তারা মায়ের সঙ্গে বাড়ি যেতে চেয়েছিল। বাড়ি গিয়ে ভাইবোন আর খেলার সাথীদের সঙ্গে ঈদ করবে। মায়েরা বাড়ি না নেওয়ায় শিশু দুটি শিশু সদনের কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে গিয়েছিল। বিষয়টি টের পেয়ে সদনে কর্মরত কম্পাউন্ডার তাদের ধরে শিশু সদনে এনে গাছের ডাল ভেঙে বেধড়ক পেটান। urgentPhoto
গত ৪ জুলাই এই ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের একটি ভিডিও গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জেলা প্রশাসক ড. মো. গাজী সাইফুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তাঁদের তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে অভিযুক্ত কম্পাউন্ডার মো. দুলাল মিয়াকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
চার মাস আগে বরিশাল নগরীর আমতলা মোড়ে অবস্থিত সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সরকারি শিশু সদনে আশ্রয় নেয় বরিশালের বাকেরগঞ্জের আঁখি ও আমিরাবাদের ডালিয়া। তারা শিশু সদনের স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে ১০০ মেয়ে শিশু অবস্থান করছে।
আঁখি ও ডালিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪ জুলাই সকালে তাদের মায়েরা দেখা করতে আসেন। এ সময় বাড়ি যাওয়ার জন্য বায়না ধরে তারা। কিন্তু হতদরিদ্র মায়েদের পক্ষে তাদের বাড়ি নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন সদনে থাকলে তাঁদের আদরের সন্তান একটু ভালো থাকবে, নতুন কাপড় পাবে, দুই বেলা অন্তত ভালো খাবার পাবে। আর তাই দেখা করে তাদের কিছু না বলেই সদন থেকে বের হয়ে যান মায়েরা। তাঁদের পিছু পিছু বের হয়ে যায় শিশু দুটিও। প্রথমে আঁখি ও তার পিছনে ডালিয়া। তারা প্রথমে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড ও পরে নগরীর সাগরদী এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকানে যায়। সেখানে সদনের কর্মচারী কাদের দেখে সদনে খবর দেয়। এরপর তাদের সেখান থেকে ধরে এনে সদনে কর্মরত কম্পাউন্ডার মো. দুলাল মিয়া গাছের ডাল ভেঙে নির্মমভাবে পেটান।
আর এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে কেউ। পরে গত সোমবার তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে টনক নড়ে সবার।
ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা শার্ট পরা এক ব্যক্তি (কম্পাউন্ডার মো. দুলাল মিয়া) গাছের ডাল ভেঙে একটি ভবনের প্রবেশ মুখে দুই শিশুকে নির্মম ভাবে পেটাচ্ছেন। শিশু দুটি বারবার ‘আর করব না, করব না’-বলে চিৎকার করে কাঁদতে থাকলেও কিছুতেই থামছিলেন না দুলাল মিয়া। মার খেতে খেতে শিশু দুটি বসে পড়লেও লাগাতার পেটাতে থাকেন তিনি। যে পায়ে হেঁটে শিশুরা মায়ের কাছে বাড়ি যেতে চেয়েছিল বারবার সেই পায়েই কাচা ডাল দিয়ে বাড়ি দিচ্ছিলেন দুলাল মিয়া। এ সময় শিশু দুটি বারবার চিৎকার করে ‘ও স্যার ও স্যার, আর করব না, আর করব না’ বলতে থাকে। পরে দুলাল মিয়া এদের মধ্যে একজনকে বসা অবস্থা থেকে দাঁড় করিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। শিশুটি সদনের বাইরে গিয়েছিল কি না জিজ্ঞেস করতে থাকেন দুলাল। শিশুটি দোষ স্বীকার করলে মারের গতি বেড়ে যায় দুলালের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. মো. গাজী সাইফুজ্জামান বলেন, ‘শিশু দুটি পালিয়ে গিয়েছিল। পরে তাদের ধরে এনে বকা দেওয়া হয়েছে এবং মার দেওয়ার ভয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু তাদের আসলেই মারা হয়েছিল কি না, তা তদন্ত না করে বলা যাবে না। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’