নাফে ১২ নৌকাডুবি, ৫ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর টানা হামলা-নির্যাতন-ধর্ষণের শিকার হয়ে বাস্তুভিটা ছেড়ে বাংলাদেশের আসার পথে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বহনকারী অন্তত ১২টি নৌকা সীমান্তবর্তী নাফ নদীতে ডুবে গেছে।
আজ বুধবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ এলাকার নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পাঁচটি লাশ ভাসতে দেখে লোকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেয়। পরে লাশগুলো ডাঙায় নিয়ে আসা হয়।
উপকূলের নিরাপত্তায় কাজ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোস্টগার্ড শাহপরীর দ্বীপের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট ফয়সাল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তাঁদের সদস্যরা উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
এ ব্যাপারে টেকনাফ থানায় যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর প্রতিদিনই হাজার রোহিঙ্গা বিপদসংকুল নদী ও সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। রোহিঙ্গা
শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে, গত ১৩ দিনে বাংলাদেশে দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে নাফ নদীতে নৌকাডুবিতে এখন পর্যন্ত ৬০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ঠিক কতজন নিখোঁজ হয়েছেন, তার কোনো প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যায়নি।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। সেখান থেকে পালিয়ে আসার রোহিঙ্গাদের দাবি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বাচারে গ্রামের পর গ্রামে হামলা নির্যাতন চালাচ্ছে। নারীদের ধর্ষণ করছে। গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ সাধারণ নাগরিক।
মিয়ানমার সরকারের আরো দাবি, ‘বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা’ এখন পর্যন্ত রাখাইনের প্রায় দুই হাজার ছয়শ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এখনো রাখাইন রাজ্যে থাকা মুসলিমদের মধ্যে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।