নাফ নদীতে নৌকাডুবি, ৭ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফ নদীতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের বহনকারী অন্তত ১১টি নৌকা ডুবে গেছে। এদিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের নাফ নদী থেকে আজ বুধবার সাতজন রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে নৌকায় করে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পথে এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। নৌকাডুবিতে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
কোস্টগার্ডের শাহপরীর দ্বীপ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ফয়সাল জানান, সকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ মাঝেরপাড়া পয়েন্টে পাঁচটি লাশ এবং দুপুরে জালিয়াপাড়া পয়েন্টে দুটি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া তিনি মিয়ানমারের নাইক্ষংদিয়া পয়েন্টে দুটি নৌকা ডোবার খবর পেয়েছেন বলেও জানান।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাঈনুদ্দিন খান জানান, নৌকাডুবির ঘটনা শুনে তিনি ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠিয়েছেন।
৩০১৪ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত : এদিকে টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে তিন হাজার ১৪ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
টেকনাফে বিজিবির ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম জানান, গতকাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে দুই হাজার ৬৪৯ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়।
অপরদিকে শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্ট দিয়ে ৩৬৫ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে কোস্টগার্ড। এসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল।
এদিকে এখনো বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে অনুপ্রবেশ করে উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় ঝুপড়ি বানিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর প্রতিদিনই হাজার রোহিঙ্গা বিপদসংকুল নদী ও সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে, গত ১৩ দিনে বাংলাদেশে দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে নাফ নদীতে নৌকাডুবিতে এখন পর্যন্ত ৬০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ঠিক কতজন নিখোঁজ হয়েছে, তার কোনো প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যায়নি।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের’ সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এই হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। সেখান থেকে পালিয়ে আসার রোহিঙ্গাদের দাবি, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বিচারে গ্রামের পর গ্রামে হামলা-নির্যাতন চালাচ্ছে। নারীদের ধর্ষণ করছে। গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ সাধারণ নাগরিক।
মিয়ানমার সরকারের আরো দাবি, ‘বিদ্রোহী সন্ত্রাসীরা’ এখন পর্যন্ত রাখাইনের প্রায় দুই হাজার ৬০০ বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এখনো রাখাইন রাজ্যে থাকা মুসলিমদের মধ্যে মাইকে প্রচার চালাচ্ছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।