আদালতে দুদক কর্মকর্তা
‘জিয়া অরফানেজে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ হয়নি’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে কোনো রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি বলে আদালতকে জানিয়েছেন মামলার বাদী ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক হারুন-অর রশীদ। আজ বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে শুনানি শেষে তাঁর আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এ কথা জানান।
তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে বাদী হারুন-অর রশীদকে জেরা করেন খন্দকার মাহবুব।
এ সময় দুদকের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। এ ছাড়া মামলা দুটির প্রধান আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ জামিনে থাকা অন্য আসামিরাও আদালতে হাজির ছিলেন।
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘জেরায় এ মামলার বাদী স্বীকার করেছেন, এ মামলায় কোনো অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি এবং এ মামলায় সরকারের কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনের ২ নম্বর ধারায় যে মামলা, সে মামলায় যে পুঁথিপত্র দরকার, তা এখানে নাই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই মামলাটি করা হয়েছিল।’
জেরা শেষে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো রাষ্ট্রীয় টাকা আত্মসাতের কথা বলি নাই। আমরা বলেছি ক্ষমতায় থাকাকালীন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি কোনো ট্রাস্ট করতে পারেন না। এটা আইনের ব্যত্যয়। দ্বিতীয়ত, যে ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে, সে ট্রাস্টে বেগম জিয়া, তারেক রহমানসহ অন্যান্য আসামি, যেমন—হারিছ চৌধুরী, মুনির এঁরা এগুলো আত্মসাৎ করেছেন।’
জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আসামিপক্ষের জেরা ও সাক্ষ্যগ্রহণের দিন নির্ধারণ ছিল আজ। এদিন বাদীকে আংশিক জেরা করার পর বিচারক আগামী ৩ আগস্ট পরবর্তী জেরার দিন নির্ধারণ করেন।
আদালতে শুরুতেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী হারুন-অর রশীদকে জেরা পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন জানান খালেদার আইনজীবীরা। তাঁরা আবেদনে উল্লেখ করেন, সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিল চেয়ে করা খালেদা জিয়ার আবেদন সম্প্রতি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে তাঁরা আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করবেন। কিন্তু আদেশের কপি পাওয়া যায়নি বলে জেরা স্থগিতের আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
এ সময় আদালত আবেদনটি নথিভুক্ত করে নির্ধারিত তারিখের আগেই উচ্চ আদালতে শুনানি শেষ করার আদেশ দেন।
অন্যদিকে, জামিনে থাকা দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের জামিন স্থায়ী করার আবেদন জানান তাঁদের আইনজীবী এ এন এম আবেদ রাজা। শুনানি শেষে বিচারক এ আবেদন মঞ্জুর করেন।
খালেদার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুদক কর্মকর্তা হারুন-অর রশীদ।
ওই মামলার অপর আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
অন্যদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরো একটি মামলা করে দুদক।
এ মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
পরে ৫ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন খালেদা জিয়া।
গত ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দুই মামলায় অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।