বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত, পাহাড়ে ধসের শঙ্কা
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর পাশে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করা লঘুচাপটি দ্রুত ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। এটি ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগরে মাঝারি ধরনের উত্তাল রয়েছে।
আজ রোববার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচলের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কসংকেত ও নদ-নদীর পানি উত্তাল থাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) শিমুলিয়া-কাওরাকান্দি, শিমুলিয়া-মঙ্গল মাঝি, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, আরিচা-কাজীর হাট, ভোলা-লক্ষ্মীপুর পথে লঞ্চ, ট্রলার, সি-বোট চলাচল বন্ধ করে দেয়। বরিশালের অভ্যন্তরীণ পথে কম উচ্চতার লঞ্চ চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ধসের আশঙ্কা
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পাঠানো অন্য এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করা মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে নৌ চলাচল বন্ধ
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে আজ রোববার শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মঙ্গল মাঝির ঘাট থেকে শিমুলিয়া নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শরীয়তপুরের মঙ্গল মাঝির ঘাটে কয়েক হাজার যাত্রী আটকা পড়েছেন। এ ছাড়া শিমুলিয়া-কাওরাকান্দি নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ, সি-বোট ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ দুপুর ১টা থেকে শিমুলিয়া ঘাট থেকে এসব ছোট নৌযান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শিমুলিয়া নদীবন্দরে নৌপুলিশ ফাঁড়ির সার্বিক দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলী হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় বন্ধ রাখা নৌযান চালু করা হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আবদুল আলীম জানান, বৈরী আবহাওয়া ও পদ্মা উত্তাল থাকায় ছয়টি ডাম্প ফেরি বন্ধ রয়েছে। তবে তিনটি রো রো ফেরিসহ অন্যান্য মোট ১০টি ফেরির মাধ্যমে বাস-ট্রাক ও প্রাইভেটসহ জনসাধারণ পারাপার হচ্ছে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজীর হাট নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আজ বিকেল ৫টা থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ।
মেঘনা নদী উত্তাল থাকায় আজ রোববার সকাল থেকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর পথে ফেরি ও সব পথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই পথে চলাচলকারী শত শত যাত্রী ও যানবাহন চালকরা। ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হওয়া যাত্রীরা আটকা পড়েছেন। ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে শতাধিক গাড়ি।
এ ব্যাপারে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিসির ঘাট ব্যবস্থাপক মো. আবুল আলম জানান, মেঘনা নদী উত্তাল থাকায় ফেরি চলাচল করতে পারছে না। তাই ভোলা-লক্ষ্মীপুর পথে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ আজ বরিশালের অভ্যন্তরীণ পথে ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। আবহাওয়া প্রতিকূল ও নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্কসংকেত থাকায় আজ রোববার বেলা ১২টায় এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
বরিশালে নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক মো. আবুল বাশার মজুমদার জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও ২ নম্বর সতর্কসংকেত থাকায় আজ রোববার বেলা ১২টা থেকে বরিশালে অভ্যন্তরীণ নৌপথে ৬৫ ফুটের নিচে সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় ৬৫ ফুটের ওপরে যেসব লঞ্চ চলাচল করছে তারাও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে।
এদিকে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় লঘুচাপের কারণে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে মংলা বন্দর। গতকাল শনিবার থেকে দিনভর একটানা বৃষ্টির কারণে বন্দরে অবস্থানরত সব দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য বোঝাই, খালাস ও পরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে আজ ভোর থেকে মংলাসহ আশপাশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এতে মংলা বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।