কেশবপুরে ৬২ গ্রাম প্লাবিত, ভেসে গেছে সহস্রাধিক মাছের ঘের

অবিরাম বর্ষণ এবং কপোতাক্ষ ও হরিহর নদীর উপচে পড়া পানিতে যশোরের কেশবপুর পৌর শহরসহ উপজেলার ১৮টি গ্রাম সম্পূর্ণ ও ৪০টি গ্রাম আংশিক প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫০ হাজার মানুষ।
কেশবপুর শহরের মাছ বাজারসহ অসংখ্য রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ছোট-বড় এক হাজার ২২৮টি মৎস্য ঘের ও পুকুরের মাছ। তাৎক্ষণিকভাবে নিরূপণ করা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে তিন কোটি টাকা বলে মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
বসতবাড়িতে পানি ওঠায় পানিবন্দি মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়নি। সরকারিভাবে পাঁচ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হলেও এখনো তা দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ, কপোতাক্ষ ও হরিহর নদীর উপচে পড়া পানিতে কেশবপুর পৌরসভাসহ উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে ফতেপুর, আওয়ালগাতী, শুড়িঘাটা, বগা, চাদড়া, সরসকাটি, ত্রিমোহিনী, মির্জাপুর, কোমরপোল, গোবিন্দপুর, শেখপুরা, চিংড়া, নেহালপুর, রেজাকাটি, সাগরদাঁড়ি, বিষ্ণুপুর, শ্রীপুর, মহাদেবপুর, ত্রিমোহিনী, পাঁজিয়া, আড়ুয়া, নারায়ণপুর, ময়নাপুর, সানতলা, ডহুরী, ভরতভায়না, আগরহাটি, বরনডালীসহ ৬২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে শুড়িঘাটা, চিংড়া বাজার ও ত্রিমোহিনী বাজার।
এরই মধ্যে বগা, মহাদেবপুর, নেহালপুর, রেজাকাটি, চাঁদড়া, সরসকাটি, বরণডালী, ত্রিমোহিনী ও মধ্যকুল উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সাতটি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মধ্যকুল মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে মেঝে ধসে পড়েছে।
কপোতাক্ষ নদের পানি দু-তিন ফুট বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। কপোতাক্ষ নদের উজানের পানিতে পাঁজাখোলা থেকে শুড়িঘাটা গ্রামরক্ষা বাঁধে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধ উপচে পানি গ্রামাঞ্চলে ঢুকে যাচ্ছে।
পানির তোড়ে ভেসে গেছে এলাকার এক হাজার ২২৮টি মৎস্যঘের ও পুকুরের মাছ। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস জানান, এক হাজার ২২৮টি মৎস্যঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে তিন কোটি টাকা নিরূপণ করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিপুল কুমার মালাকার জানান, ১৮টি গ্রাম সম্পূর্ণ ও ৪০টি গ্রাম আংশিক প্লাবিত হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। ত্রিমোহিনী, সাগরদাঁড়ি ও বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের দুর্গতদের জন্য জরুরি ত্রাণ হিসেবে পাঁচ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।
কেশবপুর নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুবক্কর সিদ্দিকী জানান, কপোতাক্ষ, হরিহর নদী খনন না করা এবং পাউবোর অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণের ফলে কেশবপুরে বন্যা দেখা দিয়েছে।