‘সব নির্দেশ আসছে একই জায়গা থেকে’
বাংলাদেশের সংবিধান, নিয়মকানুন সবকিছু এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যেন তা এককেন্দ্রিক শাসন কিংবা এককেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার মধ্যে দেশকে ঠেলে দিচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও টিআইবির চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল। তিনি আরো বলেন, এই ব্যবস্থাকে কখনোই গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলা যায় না।
‘মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয়ে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সিএজি কার্যালয়ে নিয়োগ থেকে শুরু করে কাজের বিভিন্ন স্তরে পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। কর্মচারী নিয়োগের জন্যও সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সুপারিশ আসে। প্রতিষ্ঠানটিতে বদলি, নিয়োগ, পদোন্নতিসহ প্রায় সব কিছুতেই রয়েছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এ ছাড়া কার্যালয়ে দক্ষ ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের সমস্যা, পদোন্নতিতে সমস্যা, হিসাবরক্ষণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাবসহ বেশকিছু দুর্বলতা রয়েছে।
দুর্নীতি কমিয়ে আনতে ২০টি সুপারিশও করেছে টিআইবি। প্রতিবেদন প্রকাশের পর সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে সমস্যা সেটি হলো, যাকে যে ক্ষমতা দেওয়ার কথা বা ক্ষমতার যে একটা বিকেন্দ্রীকরণের বিষয় আছে, যেটা গণতান্ত্রিক সমাজের একটা বিরাট বড় শর্ত। যে প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব অবস্থান থেকে তার দায়িত্বটা স্বাধীনভাবে (স্বাধীন কথাটার ওপর এখানে জোর দিতে হবে) তার বিবেকের যে নির্দেশ আছে সেই অনুযায়ী সেই কাজগুলো করতে পারবে। কিন্তু আমরা দেখছি যে ঘুরে ফিরে নির্দেশটা সেই একই জায়গা থেকে আসছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের সংবিধান, সব নিয়মকানুন এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে অনবরত যেটা একটা এককেন্দ্রিক শাসন কিংবা এককেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার মধ্যেই দেশটাকে ঠেলে দিচ্ছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাংবিধানিকভাবে সিএজিকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটাকে সুরক্ষা করতে হবে। নতুন যে অডিট আইনের কথা বলা হচ্ছে সেটির মধ্যে এমন উপাদান নিশ্চিত করতে হবে যেন এই কার্যালয় কারো প্রভাবমুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারে। সব কিছুর পরও যদি প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের মধ্যে পুরস্কার এবং তিরস্কারের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে তাহলে বর্তমান জনবল ও সীমাবদ্ধতা নিয়েও এগিয়ে যাবে তারা।
টিআইবির মতে, প্রতিষ্ঠানটির নিজেদের যেমন সমস্যা আছে তেমন আছে বাইরের চাপও। তাই যতই স্বাধীন বলা হোক না কেন এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো অধীনস্থই রয়ে গেছে। তবে অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো এখানেও অনেক কর্মকর্তা আছেন যাঁরা সৎভাবে কাজ করতে চান। তাঁদের কারণেই অনেকটা এগিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। এদের উৎসাহিত করারও তাগিদ দিয়েছে টিআইবি।