কুড়িগ্রামের বন্যার আরো অবনতি
কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে নয় উপজেলার ৬৩ ইউনিয়নের সাড়ে ৫০০ গ্রাম।
জেলার সাড়ে ৯০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ।
কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এ ব্যাপারে জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শওকত আলী সরকার বলেন, ‘আমি রংপুরে মিটিংয়ে আছি। আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতে পারেন।’
কাঁচা-পাকা সড়ক ও গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসতভিটা ছেড়ে উঁচু বাঁধ ও সড়কে আশ্রয় নিয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণের অভাবে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে বানভাসি মানুষ। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের তীব্র সংকট।
ধরলা নদীর অববাহিকায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চরশীতাইঝাড় গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, ‘বন্যার পানি নামতে না নামতেই আবারও বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি। ১২-১৩ দিন থেকে বন্যার কারণে দুর্ভোগে আছি। কেউ আমাদের খোঁজ নেয় নাই। খাবার নাই, কাজ নাই। খুব কষ্টে আছি।’
চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের মদনমোহন গ্রামের বাসিন্দা মতিউর, ছক্কু ও রাবেয়া বেগম জানান, আমরা ১৪-১৫ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছি কিন্তু এপর্যন্ত কোনো সাহায্য পাইনি।
চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, আমার এলাকায় তিন হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দি আর ২৫০ পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ত্রাণের দুই টন চাল পেয়েছিলাম তা দুই শতাধিক মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
চিলমারীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা বলেন, ‘চিলমারী উপজেলার জন্য নতুন করে আরো ৩০ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি, যা বিতরণের কাজ চলছে।’
জেলা প্রশাসন থেকে বানভাসি মানুষের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন চাল ও আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা এখনো বিতরণ শেষ হয়নি। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় বহু বানভাসি মানুষের ভাগে ত্রাণ জোটেনি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে বন্যার্তদের জন্য নতুন করে ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে।’
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি তিন সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নুনখাওয়া পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।