চলমান পরিস্থিতিতে ১১০১ চিকিৎসকের উদ্বেগ
দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চিকিৎসক সমাজ। সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন এক হাজার ১০১ জন চিকিৎসক।
বিবৃতিতে চিকিৎসকরা বলেন, ‘হত্যা, গুম, নির্যাতন, সহিংসতা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন রকম অপরাধে দেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন, অংশগ্রহণহীন, প্রহসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে এ রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। স্কুল, কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, শিল্প-কলকারখানা প্রায় বন্ধের উপক্রম। অর্থনীতি আজ ধ্বংসের পথে। বর্তমানে এ সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘আমরা চিকিৎসক সমাজ আর সাধারণ মানুষের মতো একবাক্যে মনে করি এই সমস্যা রাজনৈতিক ও নির্বাচনকেন্দ্রিক। এর সমাধান হতে পারে শুধু সংলাপের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে। আমরা লক্ষ্য করছি, শুধু আওয়ামী লীগ ব্যতীত দেশের ভিতরে সাধারণ জনগণ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, সুধী সমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, টকশোসহ সবাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের তাগিদ দিচ্ছেন। এ ছাড়া আমাদের বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, জাপান, ভারত, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্র আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট উত্তোরণের তাগিদ দিচ্ছেন। এ ছাড়া জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ সব বিদেশি সংস্থাও একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ রোগে ভুগছেন, তাঁর শরীরে তিনটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তিনি লাঠি ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। এ রকম রাজনীতিবিদকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডের পর রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘মাহমুদুর রহমান মান্নার টেলিফোনের কথোপকথন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যদি তাঁর আলাপে কোনো অপরাধ হয়ে থাকে তাঁকে আইন অনুসারে বিচারের ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। আজ রাত ৩টার সময় তার পরিবারের সদস্যদের তথ্যানুযায়ী সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাঁর আত্মীয়র বাসা বনানী থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিবৃতি দিচ্ছেন তাঁরা তাঁকে আটক করেননি। তাহলে মাহমুদুর রহমান কোথায় কিভাবে আছে, কে বা কারা ধরে নিয়ে গেছে তা সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে, তা না হলে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি আরো ক্ষুণ্ণ হবে, জনগণ যা বোঝার তা বুঝে নেবে।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন- অধ্যাপক এম এ মাজেদ, অধ্যাপক আ. বায়েস ভূইয়া, এম মবিন খান, অধ্যাপক খাদিজা বেগম, অধ্যাপক আব্দুল মান্নান মিয়া, অধ্যাপক সায়েবা আক্তার, অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক মতিউর রহমান মোল্লা, অধ্যাপক মিজানুর রহমান, অধ্যাপক রফিকুল কবির লাবু, অধ্যাপক মোস্তাক রহিম স্বপন, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন, অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল হক, অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ প্রমুখ।