জাপানি নাগরিক হত্যা : রিমান্ড শেষে বিএনপি নেতাকে কারাগারে

রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা রাশেদ উন নবী বিপ্লবকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ শনিবার সকালে জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আবু তালেবের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার আদালত বিপ্লবের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই রিমান্ড চলাবস্থায় পুলিশ আজ বিপ্লবকে আদালতে হাজির করে।
এদিকে হোশি কুনিও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীতে আটক ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা সুলতান নাহিদ ও এইচ এম শাহরিয়ারকে আজ দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে কাউনিয়া থানা পুলিশ। তাঁদের গতকাল শুক্রবার রাজশাহী থেকে আটক করা হয়। তবে পাবনা থেকে আটক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক সুইটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সুইট হত্যাকাণ্ডে রংপুরে গ্রেপ্তার হওয়া হুমায়ুন কবীর হীরার খালাতো ভাই।
হোশি কুনিওকে হত্যার দিনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে তাঁর প্রকল্প সহকারী হুমায়ুন কবীর হীরা ও বিএনপি নেতা রাশেদ উন নবীসহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। এর পরদিন কাউনিয়া থানায় অজ্ঞাত তিন ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম। ৫ অক্টোবর হীরা ও বিপ্লবকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তদন্ত কমিটির বৈঠক
আজ বেলা ১২টার দিকে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ে হোশি কুনিও হত্যাকাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ডিআইজি হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে র্যাবের প্রতিনিধি মেজর আশরাফ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুস ছালাম, হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মামুনুর রশিদ, রংপুরের পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক, সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জোবায়ের আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে ডিআইজি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘তদন্ত দীর্ঘ প্রক্রিয়ার একটি বিষয়, এটি একদিনে বা এক ঘণ্টায় শেষ করার মতো নয়। যেহেতু এটি হত্যার ঘটনা। এখানে অনেক কিছু আমাদের মিলিয়ে দেখতে হয়। তথ্য-উপাত্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা একটু সময়ের ব্যাপার। এত অল্প সময়ের মধ্যে যদি শেষ হয়ে যেত তাহলে তদন্তের গুরুত্ব থাকত না। তদন্ত সময় নিয়ে সূক্ষ্মভাবে করতে হয়। এই কাজটিই চলছে।’
রংপুরের পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘তদন্তসংশ্লিষ্ট বিষয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত করে যাচ্ছি।’
এদিকে পিবিআইয়ের একটি দল এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে। কিন্তু পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুস ছালাম মিডিয়ার সামনে এ ব্যপারে কিছু বলতে রাজি হননি।
এখনো দাফন হয়নি
অষ্টম দিনের মতো আজও হোশি কুনিওর লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। গত বৃহস্পতিবার জাপান দূতাবাস থেকে রংপুরে লাশ দাফন করার জন্য রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বলা হলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
গত ৩ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে রংপুরের মাহীগঞ্জের আলুটারী গ্রামে দুর্বৃত্তরা গুলি চালায় হোশি কুনিওর ওপর। তাঁর শরীরে তিনটি গুলি লাগে। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এক বছরের ভিসা নিয়ে হোশি কুনিও রংপুরে এসেছিলেন। ছয় মাস ধরে তিনি এই এলাকায় একটি কৃষি প্রকল্প পরিচালনা করছিলেন।