ঘুম ভাঙায় পানকৌড়ি
দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। তার ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে তালগাছের সারি। পাশেই নয়নাভিরাম বিল। বিপরীতে ছবির মতো কয়েকটা বাড়ি। বাড়িগুলোর পাশে বাস করে পানকৌড়ি, যাদের কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে বাসিন্দাদের। ভরদুপুর কিংবা সন্ধ্যায় তাদের কিচিরমিচির নজর কাড়ে পথিকের।
শূন্যে পাখা মেলা গাছে পানকৌড়ির কিচিরমিচির শুনতে এই প্রতিবেদক যান ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘড় ইউনিয়নের নকুলহাটি গ্রামের চেয়ারম্যানবাড়িতে। যেতেই চোখ পড়ে পাশাপাশি থাকা তিনটি তেঁতুলগাছে। কালো রঙের পানকৌড়িতে ছেঁয়ে গেছে গাছগুলো। এর মাঝে দু-একটা সাদা রঙের বক। ওই তিনটি গাছ ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন বাঁশগাছে পাখিদের আনাগোনা।
বাড়ির পাশের গাছে শত শত পাখির এ অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান লতিফ মিয়া। তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সযতনে পাখিদের আগলে রেখেছেন। শিকারিদের রোষানলে পড়তে দেন না। তাঁর বাড়ির পাশের বিলের মাছ খেয়ে আয়েশি দিন কাটাচ্ছে পাখিরা।
জানতে চাইলে লতিফ মিয়া বলেন, ‘তিন বছর ধরে পাখিগুলো আসছে। তারা এখানে এসে ঘর বানায়, ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায়। আমাদের দেশে প্রকৃতির এই শান্ত প্রাণীদের আবাসন-সংকট প্রকট। আমরা তাদের দেখে রাখায় এলাকাবাসীর মনে ক্ষোভ থাকলেও তারা অনিষ্টকর কিছু করতে পারছে না ওদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই।’
পাখিদের গল্প জানতে চাইলে লতিফ মিয়ার ছেলে ওয়াসিম জাফর বলেন, তিন বছর ধরে এখানে পাখি আসছে। প্রতিবছর মে মাস থেকে পাখির আগমন শুরু হয়। প্রথমে আসে কয়েক হাজার বক। এগুলো বাসা বাঁধে গাছের ডালে। ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায়। এর পর আসে পানকৌড়ি। তারাও বাসা বাঁধে, বাচ্চা ফোটায়। গত দুই বছর শুধু বক এসেছিল। এবারই প্রথম বকের সঙ্গে এসেছে পানকৌড়ি। বক সেপ্টেম্বরের মধ্যে চলে যায়। পানকৌড়ি কত দিন থাকবে, তা বলা যাচ্ছে না।
ওয়াসিম জাফর জানান, পানকৌড়ির বাচ্চাগুলো বড় হয়ে উঠেছে। তাদের ডাকে মুখর পুরো এলাকা। বাচ্চাদের রেখে মা পাখিগুলো চলে যায় দূরদূরান্তে। বিকেল থেকেই তারা মুখে করে ছানাদের জন্য খাবার নিয়ে ফিরতে থাকে।
পানকৌড়ি দেখতে দূর থেকে আসা আবু নাসের বলেন, ‘আমি এত পাখি এখানে আছে তা শুনে দেখতে এসেছি। এখন বাস্তবে যা দেখলাম, তা বলার মতো নয়। এককথায় অভূতপূর্ব।’
জলিল নামের লতিফ মিয়ার এক প্রতিবেশী বলেন, ‘আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। এদের কারণে বাইরে দাঁড়াতেই পারি না। হাত-পা ভরে পায়খানা করে দেয়। তার পরও শত কষ্ট সহ্য করে ওদের নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা করছি।’
নাসরিন নামের একজন বলেন, ‘সত্য কথা বলতে, আমরা এলাকাবাসী পাখিদের মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়েছি। হয়তো একটা সময় ওরা এখান থেকে চলে যাবে। তখন খুব খারাপ লাগবে আমাদের।’