প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠির জবাব মেলেনি ৩ বছরেও!
বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় নির্মাণের স্থান চিহ্ণিত করা আছে। ২০১২ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে সচিবালয় নির্মাণের জন্য ফলক উন্মোচন করেছিলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে সচিবালয় নির্মাণের কার্যক্রম উদ্বোধনের জন্য দিন নির্ধারণ ও সময় চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিঠি পাঠানো হয়। তবে এরপর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও জবাব মেলেনি সেই চিঠির। ফলে সচিবালয়ের ফলক উন্মোচনের মধ্যেই আটকে আছে আলাদা সচিবালয় নির্মাণের কাজ।
এতে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হওয়ার আট বছরেও নিজস্ব সচিবালয় পায়নি বিচার বিভাগ। ফলে মামলার জট দিন দিন বেড়েই চলেছে।
২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক করা হয়। এরপর থেকে নির্বাহী হাকিমদের পরিবর্তে বিচার বিভাগীয় হাকিমরা বিচারকাজ পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় নির্মাণ করা হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে আলাদা সচিবালয় কার্যক্রম উদ্বোধনের জন্য দিন নির্ধারণ এবং সময় চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ওই চিঠির জবাব পাওয়া যায়নি। ফলে বিচার বিভাগের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হয়নি। আইন মন্ত্রণালয় বর্তমানে বিচার বিভাগের সচিবালয়ের নিজেদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সুফল পাচ্ছেন না বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা।
এসব কারণে বাড়ছে মামলাজট। গত আট বছরে মামলা জটে আটকে আছে প্রায় ১৪ লাখ মামলা। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার সময় দেশের সব আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার। ২০১০ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ লাখে। বর্তমানে সারা দেশে মামলার সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। এর মধ্যে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে মামলার সংখ্যা ১২ হাজার ৪০৬টি। হাইকোর্ট বিভাগে তিন লাখ ৮৯ হাজার ৩১০টি, জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৯০২টি এবং সব ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ২৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
পৃথক সচিবালয় স্থাপনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার সৈয়দ এ আমিনুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পৃথক সচিবালয় নির্মাণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চাওয়া সময় সম্পর্কে এখনো কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া পৃথক সচিবালয় করার বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপও নেই।’
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘সারা দেশে লাখ লাখ মামলা বিচারধীন। সরকার নিজেদের ক্ষমতা খর্ব হওয়ার আশঙ্কায় পৃথক সচিবালয় করছে না। এতে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হলেও তার কোনো সুফল পাচ্ছেন না বিচারপ্রার্থীরা।’
সকারের লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে বিচারপ্রার্থীরা সুফল পাবে বলে জানান আটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিচার বিভাগের কাজকে এগিয়ে নিতে আলাদা সচিবালয়ের গুরুত্বের কথাও স্বীকার করেন তিনি।
তবে কবে নাগাদ এই সচিবালয় নির্মাণের কাজ শুরু হবে বা এ বিষয় ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই। তাই এখনো ঝুলেই আছে পুরো বিষয়।