বাস উঠল ফুটপাতে, পা হারালেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা
ঠিক দুপুর ২টা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী ব্যবস্থাপক কৃষ্ণা রায় (৫২) একটি ব্যাংকে যাচ্ছিলেন নিজের জমানো টাকা তুলতে। রাজধানীর বাংলামোটরের ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলেন তিনি। হঠাৎ ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসেসের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উঠে যায় ফুটপাতে! আর এতেই বাঁ পা হারাতে হয় কৃষ্ণা রায়কে।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) এনটিভি অনলাইনকে এসব কথা বলছিলেন শিহাব আহমেদ। পথচারী শিহাব আহমেদ ও ইমরান হোসেন কৃষ্ণা রায়কে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা।
শিহাব আহমেদ বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলেই ছিলাম। দেখলাম কৃষ্ণা রায় ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। সম্ভবত হঠাৎ বাসটি ব্রেক ফেল করে। পরে তুলে দেয় ফুটপাতে। তখন চিৎকার করে উঠেন তিনি। কাছে গিয়ে দেখি, কৃষ্ণা রায় পায়ে হাত দিয়ে বসে আছেন। এরপর ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাই আমরা। তারপর আবার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসি।’
জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে আজ মঙ্গলবার কৃষ্ণা রায়ের দুর্ঘটনার পর স্বামীর কান্না। ছবি : স্টার মেইল
ঢাকা মেডিকেল থেকে কৃষ্ণা রায়কে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর পায়ের অস্ত্রোপচার করা হয়। কেটে বাদ দেওয়া হয় বাঁ পা। সিটি স্ক্যান করার জন্য সন্ধ্যায় পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পুনরায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়।
পঙ্গু হাসপাতালে ছিলেন বিআইডব্লিউটিসির প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা খন্দকার মাসুম হাসান। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর পরই আমরা অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। পঙ্গু হাসপাতালে আসার পর তাঁর বাঁ পা কেটে ফেলা হয়েছে। এখন কৃষ্ণা রায় গুরুতর অসুস্থ। সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে এক পায়ে ভর দিয়ে চলা লাগবে।’
রাজধানীর বাংলামোটরে ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসেসের এই বাসটি আজ মঙ্গলবার দুপুরে পথচারী কৃষ্ণা রায়কে চাপা দেয়। ছবি : স্টার মেইল
কৃষ্ণা রায়ের স্বামীর নাম রাজেশ শ্যাম চৌধুরী। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর পা কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। তাঁর বাঁ পা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। পা রাখার চেষ্টা করা হলে পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে পুরো শরীর পচে যেতে পারে। তাই তাঁর পা কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন আবার তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে হবে সিটি স্ক্যান করতে। কীভাবে কী হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না।’
দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) অতিরিক্ত উপকমিশনার মেহেদী হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঘটনার পরপর বাসটির চালক পালিয়ে গেছে। তাকে এখনো আটক করা যায়নি। তবে তাকে ধরার জন্য আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। তবে বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে।’