বেপরোয়া বাস কেড়ে নিল স্কুলছাত্রের প্রাণ
শরীয়তপুরে এবার বেপরোয়া গতির একটি বাস কেড়ে নিল পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রের প্রাণ। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নড়িয়া উপজেলার গাগরিজোড়া এলাকায় ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই স্কুলছাত্র রাতুল মাঝির (১২) মৃত্যু হয়।
রাতুল নড়িয়া উপজেলার গাগরিজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। সে গাগরিজোড়া গ্রামের খলিল মাঝির ছেলে। এই নিয়ে গত দেড় মাসে শরীয়তপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় তিন শিশু স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
গত ১ জানুয়ারি নতুন বই আনতে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সোহানা আক্তার নামের এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়। সে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ছাতিয়ানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। গত ২৮ জানুয়ারি শরীয়তপুর জেলা শহরের শিশু কানন কিন্ডারগার্টেনের প্রাকপ্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদ খানের মৃত্যু হয়। বেপরোয়া গতির অটোরিকশা তাদের চাপা দিয়েছিল।
নড়িয়া থানা সূত্র জানায়, গাগরিজোড়া গ্রামের দিনমজুর খলিল মাঝির ছেলে রাতুল মাঝি আজ সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। পথে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে বিদ্যালয়ের কাছে বেপরোয়া গতির একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। শাহ মাদার নামের বাসটি শরীয়তপুর সদর থেকে জাজিরার মঙ্গল মাঝির লঞ্চঘাটে যাচ্ছিল। বাসটির বেপরোয়া গতির কারণে ওই সময় বাস থেকে ইব্রাহীম নামের এক যাত্রী ছিটকে পড়ে আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
আহত বাসযাত্রী ইব্রাহীম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানোর জন্য বাসটি পথে সময় নষ্ট করেছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে চালক বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিল। আমরা বাধা দিচ্ছিলাম। কিন্তু চালক শোনেনি। আমি গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বেপরোয়া গতির কারণে আমি ছিটকে পড়ে যাই।’
এদিকে রাতুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গাগরিজোড়া গ্রামের মানুষ ঢাকা-শরীয়তপুর সড়ক অবরোধ করে রাখে। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পুলিশ এক ঘণ্টার চেষ্টায় অবরোধ তুলে বাস চলাচল স্বাভাবিক করে। পরে বাসটি আটক করতে পারলেও চালক পালিয়ে যায়।
গ্রামবাসী রাতুলের রক্তাক্ত নিথর দেহ উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে তার বাবা খলিল মাঝি ও স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে আসে। রাতুলের মরদেহের পাশে আছড়ে পড়ে বিলাপ করতে থাকেন খলিল মাঝি। স্বজনরা তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে বিলাপ করতে করতে খলিল মাঝি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। কৃষিশ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাই। রাতুলই ছিল আমাদের স্বপ্ন। আল্লাহ কেন আমার বুকের মানিককে নিয়ে গেল।’
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একরাম আলী মিয়া বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হবে। বাস আটক করা হয়েছে। চালককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।