সোহাগীর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।
আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) টিএসসিতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তাঁরা এ দাবি জানান। সরকার এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় নিয়ে না এলে সংস্কৃতিকর্মীরা উৎসব ছেড়ে রাজপথে নামবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
এ ছাড়া আগামী ২৭ তারিখের মধ্যে জড়িতরা গ্রেপ্তার না হলে আগামী ২৯ তারিখ সারা দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় বিক্ষোভ সামবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
একই সময়ে এ ঘটনার প্রতিবাদে শাহবাগে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও গণজাগরণ মঞ্চ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
গণজাগরণ মঞ্চের বিক্ষোভ সমাবেশে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘একের পর এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে একটি ঘটনা দিয়ে আরেকটি ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকের রিজার্ভ লোপাট হলো। সেটির বিচার আমরা এখনো পাইনি। এই কেলেঙ্কারির মূল হোতা অর্থমন্ত্রীকে রেখে, কোনো সংস্কার না করে সেটি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলো। জনগণের কাছে একটা বিষয় জন্ম হয়েছে যে, এত বড় অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই এ তনু হত্যাকাণ্ড ঘটল কি না? এটি ঘটেনি,তা প্রমাণ করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তনুকে হত্যা করা হয়েছে এমন একটি জায়গায় যেখানে কোন সাধারণ মানুষ যেতে পারে না। তাহলে প্রশ্ন,কোন অসাধারণ মানুষই কি এটি ঘটিয়েছে?’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দস বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং ধানমণ্ডি রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে আজ বিকেল থেকে ২৪ ও ২৫ মার্চ তিনদিনব্যাপী স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রতিদিনই এ বিচারের দাবি উত্থাপন করব। ২৭ তারিখ বিশ্বনাট্য দিবসের প্রতিপাদ্য হবে তনুর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। ২৭ তারিখের মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে আগামী ২৯ তারিখ সারা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সংস্কৃতিকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে রাজপথ কাঁপিয়ে দেবেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ও নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘যে যেভাবেই এই অপরাধ সংঘটিত করুক না কেন ক্যান্টনমেন্ট কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারবে না। একদিকে যেমন সমাজে ধ্বস নেমেছে, তেমনি আইনশৃংলা বাহিনীর উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। এটা স্বাধীন রাষ্ট্রে চলতে পারে না।’
মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বলেন, ‘সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের কাজ এভাবে বিক্ষোভ করা নয়। তাহলে কেন আমাদের রাস্তায় নামতে হয়? আমরা আমাদের মায়ের, কন্যার নিরাপত্তা চাই।’
জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, ‘আমাদেরকে প্রতিনিয়ত নানা বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয়। এক ধরনের লুটেরা শ্রেণি তৈরি হয়েছে যারা আমাদের সমাজ পরিবর্তন করে দিতে চায়। আশা করি কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। অন্যথায় আমাদের ভাবতে হবে আমরা কি এসব বিষয় নিয়ে সংগ্রাম করব নাকি উৎসব করব।’
উল্লেখ্য, গত রোববার, ২০ মার্চ বিকেলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু (২০) বাসার কাছে টিউশনি করতে বের হন। এরপর তিনি নিখোঁজ হন। পরের দিন গত সোমবার সকালে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সোহাগী ওই কলেজের থিয়েটারের কর্মীও ছিলেন। তাঁর বাবা মো. ইয়ার হোসাইন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী ছিলেন। সেই সুবাদে সোহাগীরা অনেক দিন ধরেই অলিপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সোহাগী ছোট।