পুলিশের সামনেই শপথ নিল নারী নির্যাতন মামলার পলাতক আসামি
পটুয়াখালীতে এক গৃহবধূ ও তাঁর এক স্বজনের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার আলোচিত ঘটনায় চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি খালেদুল ইসলাম স্বপন। গলাচিপা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে এবারের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচিত চেয়ারম্যানও তিনি। নারী নির্যাতনের মামলায় খালেদুল ইসলাম পুলিশের কাছে পলাতক। দীর্ঘ দেড় মাসেও তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের দরবার হলে পলাতক খালেদুল ইসলাম চেয়ারম্যানের শপথ নিয়েছেন। খালেদুলসহ গলাচিপার নির্বাচিত সাত চেয়ারম্যানকে শপথ পড়ান জেলা প্রশাসক এ কে এম শামিমুল হক সিদ্দিকী। ওই অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশ সুপার সৈয়দ মোসফিকুর রহমান। এ সময় শপথ অনুষ্ঠানে মহিলা সংসদ সদস্য লুৎফুননেসা বেগম, জেলা পরিষদের প্রশাসক খান মোশারেফ হোসেনসহ জেলার অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান খালেদুল ইসলাম স্থানীয় সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের ছোট ভাই। গলাচিপার অপর ছয়টি ইউনিয়নের শপথ গ্রহণকারী ইউপি চেয়ারম্যানরা হলেন—চিকনিকান্দী ইউনিয়নের মো. এরশাদ হোসেন বাদল, গলাচিপা সদর ইউনিয়নের মো. হাবিবুর রহমান হাদী, রতনদি-তালতলী ইউনিয়নের গোলাম মোস্তফা খান, আমখোলা ইউনিয়নের মো. কামরুজ্জামান মনির, বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আবু জাফর খান ও গোলখালী ইউনিযনের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন।
গজালিয়ায় গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে গলচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক বলেন, মামলায় ৪ মে আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক এ কে এম শামিমুল হক সিদ্দিকী বলেন, গেজেট অনুযায়ী গলাচিপায় নির্বাচিত সব চেয়ারম্যানকে শপথ পড়ানো হয়েছে। এখানে কে চার্জশিটভুক্ত আসামি, এ তথ্য তাঁদের কাছে থাকার কথা নয়।
পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার সৈয়দ মোসফিকুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসকের দরবার হলে আইনশৃঙ্খলা কমিটির নির্ধারিত সভা ছিল। তবে সেখানে গলাচিপার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের শপথ পড়ানো হবে বা সেখানে অভিযুক্ত কোনো চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকবেন এমন তথ্য তাঁদের জানা ছিল না।
এদিকে, পুলিশের কাছে পলাতক হয়েও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে শপথ নেওয়ার ঘটনায় গলাচিপা উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত ২৬ মার্চ দুপুরে গজালিয়া এলাকার এক গৃহবধূ এবং তাঁর স্বামীর চাচাতো ভাইয়ের ছেলেকে গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ডেকে নিয়ে যায় ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এ এম কুদ্দুস মিয়া এবং নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেদুল ইসলাম। ওই গৃহবধূ ও তাঁর স্বজনকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে রেখে সালিশ বৈঠক করা হয়। এতে খালেদুল ইসলাম সিদ্ধান্ত নেন, উভয়ের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক আছে এবং এ জন্য দুজনই দোষী। এ অভিযোগে দুজনের মাথা কামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। একই সঙ্গে ছেলেটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রাত ৮টায় এ সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর খালেদুল ইসলাম ওই দুজনকে ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিণ পাশের মাঠে নামিয়ে বেদম লাঠিপেটা করেন। একপর্যায়ে গৃহবধূর পরিধেয় বস্ত্র খুলে ফেলে যৌন নিপীড়ন করা হয়। পরে নাপিত ডেকে কথিত অভিযুক্তদের মাথার চুল কামিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পরদিন সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন গৃহবধূর স্বামী।