মনুষ্যত্ব থাকলে খালেদা জিয়ার সাথে থাকতে পারেন না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন অবরোধ-হরতাল আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করেছেন। এ সময় বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদেরও সমালোচনা করে তাদের মধ্যে কোনো ‘মনুষ্যত্ববোধ’ নেই বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা পিয়ার আলী কলেজ মাঠে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মাওনা চৌরাস্তার ৪৫০ মিটার দীর্ঘ উড়াল সেতু উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০-দলীয় জোটের আন্দোলনের সমালোচনা করে বলেন, ‘মানুষকে পুড়িয়ে মারা এটা কোন ধরনের রাজনীতি আর এটা কীভাবে জনগণের রাজনীতি হয়? কী লাভ হয়েছে, কী পেয়েছে, সরকার হটাতে পেরেছে? পারে নাই, ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের কোনো সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে? পারে নাই, ব্যর্থ হয়েছে। তাঁর (খালেদা জিয়ার) এদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নাই, মানুষের সামনে দাঁড়ানোরও কোনো অধিকার নাই।’
‘আমি দেশবাসীকে বলব, খালেদা জিয়া যখনই তাঁর লটবহর নিয়ে যাবে আগে তাঁকে জিজ্ঞেস করতে হবে, এই দেশে আমার মায়ের গায়ে আগুন কেন, আমার ভাইয়ের গায়ে আগুন কেন? আমার ছোট্ট শিশু আগুনে পড়ে কেন মারা গেল? সেই জবাব আগে দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘সাবেক ভিসি থেকে শুরু করে আমাদের অনেক শিক্ষিতজন তাঁরা আবার দেখি বিএনপিকে উদ্ধারের কাজে নেমেছেন এবং খালেদা জিয়ার সাথে তাঁরা আছেন। কোনো মানুষের বিবেক থাকলে, কোনো মানুষের ভেতরে এতটুকু মনুষ্যত্ববোধ থাকলে, এই বিএনপি-জামায়াত জোট তাঁর সাথে অন্তত যারা সত্যিকার মানুষ, যাঁদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ আছে তাঁরা তাঁর (খালেদা জিয়া) সাথে থাকতে পারেন না।’
প্রধানমন্ত্রী জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন কাজের উল্লেখ করে বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাথে রাজধানীসহ দেশে অন্যান্য অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা যানজটমুক্ত ও নিরাপদ করার জন্য জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ আমরা শুরু করি ২০১০ সালে।
এ মধ্যে জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে নয়নপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মহাসড়ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কার্স অরগানাইজেশন করছে। বাকি অংশ সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর করছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
এই মহাসড়কের ২৭তম কিলোমিটারে মাওনা ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয়েছে। ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯ মিটার প্রশস্ত এই ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আমরা সারা দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এ পর্যন্ত বাস্তবায়িত উল্লেখ্যযোগ্য সেতু প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে কেরানীগঞ্জের শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু, টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার উড়াল সেতু, শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর সুলতানা কামাল সেতু, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর ওপর হজরত শাহ আমানত (রহ.) সেতু, সাঙ্গু নদীর ওপর ২১৭ দশমিক ১৫ মিটার রোমা সেতু, ২১৬ দশমিক ৪৪ মিটার থানচি সেতু, রংপুরে তিস্তা নদীর ওপর ৭৫০ মিটার তিস্তা সেতু, করতোয়া নদীর ওপর ৩০৩ দশমিক ৩২ মিটার ওয়াজেদ মিয়া সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
ঢাকায় ৮০৪ মিটার দীর্ঘ বনানী রেলওয়ে ওভারপাস, মিরপুর-এয়ারপোর্ট ১৭৯৩ মিটার রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন এবং শেখ লুৎফর রহমান সেতু নির্মাণ করা শেষ হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর সড়ক আট লেনে উন্নীতকরণসহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার বাস র্যাপিড ট্রানজিট নির্মাণ করা হচ্ছে। জয়দেবপুর হতে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের চার লেনবিশিষ্ট দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু এবং মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী নির্মাণকাজও চলছে।
‘ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার এলিভেটেড এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ১৯২ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় বাংলাদেশে পশ্চিমাঞ্চলের ৬০টি সেতু নির্মাণ, আরিচা-ঘিওর-টাঙ্গাইল সড়কের ধলেশ্বরী নদীর ওপর ৫১৫ দশমিক ১২ দীর্ঘ এলাসিন সেতু নির্মাণ, ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আমরা যে আজ পরনির্ভরশীল নই তা প্রমাণ করতে যাচ্ছি। ষড়যন্ত্রকারীরা ভেবেছিল, বিশ্বব্যাংকের সহায়তা না পেলে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করা যাবে না। ইনশাআল্লাহ্, ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সুদ আর ঋণের মধ্যেই দরিদ্র মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প হাতে নিলাম। বর্তমানে আমরা একটি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করে দিয়েছি। আর এ কারণেই যেন এক ইঞ্চি জমি অনাবাদি না থাকে। উৎপাদনমুখী এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। বর্গাচাষিদের বিনা জামানতে ঋণ দেওয়া শুরু করেছি। বিনা জামানতে একজন যুবক দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবে।’
স্থানীয় সাংসদ আলহাজ অ্যাডভোকেট রহমত আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল আলম প্রধান, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বুলবুল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মণ্ডল বুলবুল, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি এস এম আকবর আলী চৌধুরী, শ্রীপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কমর উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান জামান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সফিকুর রহমান সফিক, কৃষক লীগের সভাপতি কবির হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল ফকির প্রমুখ।