নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা জোনায়েদ সাকিরও
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদপ্রার্থী গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর হাতিরপুলে রোজ ভিউ প্লাজায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা উত্তরের এই মেয়র পদপ্রার্থী বলেন, ‘যেভাবে ভোটকেন্দ্র দখল, গণসিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে দেওয়া হয়েছে, তাতে এটাকে নির্বাচন বলে না। এ প্রক্রিয়ার ওপরে আমাদের আস্থা রাখার কোনো সুযোগ নেই। তাই ফলাফলের ওপরেও আমাদের কোনো আস্থা নেই। সুতরাং যে নির্বাচনের ওপরে আমাদের আস্থা থাকবে না, আস্থা না থাকলে সেই নির্বাচন তো প্রত্যাখ্যানই করতে হয়।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘যেভাবে ব্যালট বাক্স দখল করা হয়েছে, যেভাবে কারচুপি হয়েছে, এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে, গণসিল দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে, যেভাবে জনগণের রায় প্রকাশ করতে দেওয়া হয় নাই, তাতে এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি আমরা আমাদের পূর্ণ অনাস্থা প্রকাশ করছি। সে কারণে এর ফলাফলকেও আমাদের গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। এর ফলাফলকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’
সাকি আরো বলেন, ‘একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছি, সেখান থেকে আমাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতি কাদের সহায়তায় কীভাবে ঘটেছে, তা আপনারা জানেন। নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য প্রশাসনিক কারসাজি ব্যাপকভাবে বিরাজ করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। নির্বাচন প্রহসনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। জনগণ তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। তাই আজকের নির্বাচনের ওপরে আমাদের পূর্ণ অনাস্থা জ্ঞাপন করছি। কাজেই এ নির্বাচনের যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে, তার ওপরও আমাদের কোনো আস্থা নেই।’
সাকি আরো বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিকীকরণের সংগ্রাম আমরা দীর্ঘদিন ধরে করছি। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েও আমরা আমাদের সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে চেয়েছি, আমাদের সাধ্য যতটুকু আছে, ততটুকু নিয়ে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে থাকার চেষ্টা করেছি। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার চেষ্টা করেছি।’
এ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন বলে মনে করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনাও দেখা গেছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম, যতই দিন ঘনিয়ে আসছিল, নির্বাচনের যে পরিবেশ—এক. সকলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা। দুই হচ্ছে, নির্বাচনের যে আচরণবিধি, সেটা মান্য করা। তিন হচ্ছে যে, টাকার খেলাসহ পেশিশক্তির যে মহড়া, সেগুলো সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বারবার নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’
পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, কর্মীদের হুমকি দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগের কথা তুলে ধরে সাকি বলেন, ‘আমি নিজে ভোট দিতে গিয়ে দেখেছি যে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। তখন থেকেই মনে সন্দেহ হচ্ছিল যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না।’
বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রায় সবখানেই ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র দখল ও প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ আসে তাঁর কাছে। অনেকেই তাঁর কাছে এসে জানতে চান যে, কেন এই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে তালাবদ্ধ করে গণসিল মারা হয়েছে।
এর আগে একই অভিযোগ এনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।