কলসিন্দুরের কিশোরী ফুটবলারদের কোচ বিড়ম্বনা!
এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশের অসাধারণ সাফল্যের পেছনে কলসিন্দুরের মেয়েদের বিশাল অবদান। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার এই গ্রামের বেশ কয়েকজন মেয়ে বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। অথচ এই মেয়েদের ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলা মোহাম্মদ মকবুল হোসেন চলে গেছেন আড়ালে। আর কলসিন্দুরের মেয়েদের গড়ে তোলার কৃতিত্ব দাবি করছেন আরেকজন!
এনটিভি অনলাইনকে মকবুল হোসেন বলেন, ‘কোচ হিসেবে আমার যাত্রা শুরু ১৯৯১ সালে। ২০১১ সালে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুরোধে কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ২৫ জন ছাত্রীকে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করি। প্রাথমিকভাবে টানা ১৬ দিন তাদের প্র্যাকটিস করাই। এরপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করি কলসিন্দুর নারী ফুটবল দল।’
২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবলের জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কলসিন্দুর। আস্তে আস্তে কলসিন্দুরের মেয়েদের ফুটবল দক্ষতার কথা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। জাতীয় পর্যায়ে সাফল্যের পর এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাফল্য পাচ্ছে তারা।
মকবুল হোসেন বলেন, ‘ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের মেয়েরা ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নেপাল ও তাজিকিস্তানে এএফসি অনূর্ধ-১৪ ফুটবল এবং ঢাকায় সদ্যসমাপ্ত এএফসি অনূর্ধ-১৬ ফুটবলে সাফল্যের পেছনে তাদের বিশাল অবদান।’
কলসিন্দুরের মেয়েদের সাফল্যের পথে যাত্রার সময় ‘আবির্ভাব’ মফিজুর রহমানের। কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই সহকারী শিক্ষক এখন কিশোরী ফুটবলারদের কোচ দাবি করছেন নিজেকে। বেদনাহত কণ্ঠে মকবুল হোসেন বলেন, “কলসিন্দুর নারী ফুটবল তারকাদের ‘স্বঘোষিত’ কোচ মফিজুর রহমান। তিনি কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।”
যোগাযোগ করা হলে মফিজুর রহমান এনটিভিকে বলেন, ‘২০১৪ সালে ফিফার অধীনে বাফুফে ভবনে ছয়দিন প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। বিভিন্ন খেলা দেখেই ফুটবল শিখেছি আমি। আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। স্থানীয় পর্যায়ে খেললেও জাতীয় পর্যায়ে কখনো ফুটবল খেলিনি।’
এ প্রসঙ্গে কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিনতি রানী শীল বলেন, ‘মকবুল হোসেন একজন পেশাদার কোচ। তাঁর অনেক অবদান। তাঁর কারণেই কলসিন্দুর আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছে। তাঁকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে মফিজুর রহমান বাফুফেতে ছয়দিনের একটি ট্রেনিং নিয়েছেন আর তাঁকে কিছু বইপুস্তক কিনে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই তিনি কোচ হয়ে উঠেছেন।’
মকবুল হোসেনের ফুটবল ক্যারিয়ারও যথেষ্ট সফল। আশির দশকে ঢাকার ফুটবল লিগে দিলকুশা, ধানমণ্ডি ও আরামবাগের হয়ে খেলেছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য এবং জেলা ফুটবল দলের কোচ।